মাগুরা প্রতিনিধি: ৭ ডিসেম্বর মাগুরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মাগুরা পাক হানাদার মুক্ত হয়। ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে মাগুরা জেলার প্রায় ২৫০০ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। তৎকালীন মাগুরা মহকুমায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই শ্রীপুরের আকবর বাহিনী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মাগুরার সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের পাশাপাশি শ্রীপুরের আকবর বাহিনী, মোহাম্মদপুরের ইয়াকুব বাহিনী, মাগুরা শহরের খন্দকার মাজেদ বাহিনী ও মুজিব বাহিনী বিশেষ সাহসী ভূমিকা রাখে।
জানা যায়, পাক বাহিনী মাগুরা শহরের পিটিআই ভবন, ওয়াপদা ভবন, টিএনটি ভবন ও সরকারি বালক বিদ্যালয় ক্যাম্পে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরোচিত যুদ্ধ করে বহু পাক সেনা ও রাজাকারদের হতাহত করে। মুক্তিযোদ্ধারা শ্রীপুর থানা দখল, মাগুরা আনসার ক্যাম্প আক্রমণ বিনোদপুর যুদ্ধ, আলফাপুর যুদ্ধ, বরিশেট সহ অসংখ্য যুদ্ধে সফলতার পর মিত্রবাহিনী ও আকবর বাহিনীর যৌথভাবে ১৯৭১ এর ডিসেম্বর স্থল ও আকাশ পথে পাক সেনাদের ক্যাম্প ও অবস্থানের উপর হামলা করলে ২৫০ জন পাক সেনা নিহত ও ৮৭ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এদিকে, মিত্র বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সাহসী আক্রমণে পিছু হটে পাক বাহিনী। ফলে পাকবাহিনী হতাশ হয়ে পড়ে এবং শহর ছেড়ে কামারখালী গড়াই নদী পার হয়ে ফরিদপুর দিকে পালিয়ে যায়। অবশেষে ৭ ডিসেম্বর ভোরে আকবর বাহিনী মাগুরা শহরে প্রবেশ করে পাকসেনাদের বিভিন্ন ক্যাম্প ও গোলা বারুদ দখল করে নেয় এবং স্বাধীন দেশের ম্যাপ খচিত লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করে মাগুরা শত্রু মুক্ত হয়।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা যেমন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তেমনি মাগুরা মুক্ত দিবসের কর্মসূচীকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের অনেকে।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেশ স্বাধীনতা বিরোধীদের দখলে চলে যাওয়ার সুযোগে মুক্তিযোদ্ধা সেজে অনাচার করেছেন অনেকে। যে কারণে সেইসব নামধারী মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে বলে জানালেন মাগুরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদদের কমান্ডার মোল্যা নবুয়ত আলি।
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে মাগুরা পিটিআই ও টিএন্ডটি অফিসে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে। পিটিআই স্কুল মাঠ, ক্যানাল, ঢাকা রোড় ব্রিজ ও আড়পাড়া ব্রিজ ঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি করে ফেলে রাখতো। মুক্তিযোদ্ধাদের এছাড়া কামান্নায় পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে ২৭ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ ছাড়া পরবর্তীতে তালখড়ি ও ৩ নম্বর ব্রিজের নিকট গণ কবরের সন্ধান পাওয়া যায়।
মাগুরামুক্ত দিবস উপলক্ষে মাগুরা জেলা প্রশাসন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। মাগুরা জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম জানান, ৭ ডিসেম্বর মাগুরা মুক্ত দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য জেলার সকল মানুষের পাশাপাশি আমরা সকাল ৯টায় শহরের নোমানী ময়দান থেকে একটি র্যালি বের করে শহর প্রদিক্ষণ করে আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে দিবসটির তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনা সভা করবো। পরে সন্ধ্যা ছয়টায় ব্লাক আউট, মোমবাতি প্রজ্বলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবো।