,

ভয় দেখিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ, সেই শিক্ষক কারাগারে

জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীর মোহনপুরে ভয় দেখিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ করা সেই শিক্ষক মো. মাসুদ সরকারকে (৫০) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে আদালতের নির্দেশের পর তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

মো. মাসুদ সরকার রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাটুপাড়া কারিগরি ও বাণিজ্যিক ইনস্টিটিউটের ‘ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং’ ট্রেডের শিক্ষক। তিনি একই গ্রুপের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ধারণ করা ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে তিন বছর থেকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। ওই মামলায় সোমবার অভিযুক্ত সেই শিক্ষককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার বিকেলে অভিযুক্ত শিক্ষক আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। এর শুনানি শেষে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দা শামসুন্নাহার মুক্তি এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মো. মাসুদ সরকার রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৃত সিদ্দিক সরকারের ছেলে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক ছাত্রীর দূর সম্পর্কের চাচা। অভিযুক্তের বাড়ির পাশেই ভুক্তভোগীর বাড়ি। এজন্য ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে তার সখ্যতা পুরনো। ওই শিক্ষকের পরামর্শে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ওই ছাত্রীকে তার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বলেন। তার কথামতো ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং’ বিষয়ে ভর্তি হন ভুক্তভোগী। ভর্তির পর ওই শিক্ষক ভুক্তভোগীর বাড়িতে প্রায়ই আসতেন। ২০১৯ সালের ১০ মে দুপুর আনুমানিক আড়াইটায় ভুক্তভোগীকে নোট দেওয়ার কথা বলে ফোনে তার (অভিযুক্ত) বাসায় ডেকে নেন। এ সময় মাসুদ ভুক্তভোগীকে বাড়ির দোতলায় শয়নকক্ষে নোটগুলো রাখা আছে বলে জানায়। সেখানে ভুক্তভোগী নোট নেওয়ার জন্য গেলে অভিযুক্ত শিক্ষক তার পিছু পিছু শয়নকক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রীকে জাপটে ধরে।

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, এসময় তাকে তার বিছানায় জোরপূর্বক ফেলে দেয়। তিনি চিৎকার দিলে মুখের ভেতর কাপড় গুঁজে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। আর তার শয়নকক্ষে আগে থেকে সেট করে রাখা ফোনে সেই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। এমন লোমহর্ষক ঘটনা বাবা-মাকে জানাতে চাইলে মাসুদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধর্ষণের ভিডিও ভাইরালের হুমকি দেন। মান-সম্মানের ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা চেপে যান ওই ছাত্রী। এরপর থেকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে ওই শিক্ষক।

তিনি বলেন, ধর্ষণ ও অত্যাচার থেকে বাঁচতে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট পড়ালেখা ছেড়ে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। যে কোনোভাবে তার ঠিকানা সংগ্রহ করে ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এসে ফোন দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, জন্ম তারিখ ও নাম-ঠিকানা সংশোধন করতে হবে মর্মে দেখা করতে বলে। ধর্ষণের ভিডিও ডিলিট করার প্রতিশ্রুতিও দেয়। সরল বিশ্বাসে তখন তার সঙ্গে দেখা করেন। সে শিক্ষা অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাকে কক্সবাজারে নিয়ে যায়, যা বুঝতে পারেননি।

আগের ভিডিও ডিলিট করার আশ্বাস দিয়ে কক্সবাজারের একটি হোটেলে জোরপূর্বক আটকিয়ে পরপর তিনদিন ধর্ষণ করে। তার কথামতো ওই শিক্ষক আগের ভিডিও ডিলিট করে এবং আর কোনোদিন বিরক্ত করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। তখন তিনি আবারও বাড়িতে গিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। কিন্তু আনুমানিক ১৫ দিন পর তিনি আবারও উত্ত্যক্ত করেন। ধর্ষণের প্রস্তাব দিয়ে আগের সংরক্ষিত ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে পুনরায় ফেসবুকে ছড়ানো এবং এসএসসিতে তাকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

এরপর ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু একটি বিষয়ে (ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং) তাকে ফেল করিয়ে দেয়। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ধর্ষণের ভিডিওসহ যত রকমের ডকুমেন্ট আছে সব মুছে ফেলার কথা বলে কৌশলে রাজশাহীর একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে এসে আবারও ধর্ষণ করে। কিন্তু ওইদিনও সেই ভিডিও ডিলিট করেনি। এভাবে দিনের পর দিন ধর্ষণের ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়ে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে।

সর্বশেষ গত ৮ জুন সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে আম বাগানের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন মাসুদ তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ির দরজায় ওত পেতে থেকে তার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে যায়। তিনি ফোন নেওয়ার জন্য ঘরের দরজায় গেলে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাসুদসহ পরিবারের সদস্যরা তাকে ও তার বাবা-মার ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত-জখম করে। পরে থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি। এরপর গত ৩ জুলাই রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এ মামলা করেন। ওই মামলায় জামিন নিতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত শিক্ষককে কারাগারে পাঠান।

এই বিভাগের আরও খবর