লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি: খেজুরের রস শীতে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অন্যতম উপাদান। আগে হেমন্ত থেকে শুরু করে পুরো শীতকাল লালমোহনের গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহের ধুম পড়ে যেত। শীত মৌসুমের সংস্কৃতির একটা অংশ ছিল খেজুর গাছের উপরের অংশ আগা কেটে তা থেকে মধুরস নির্গত করানো।
গ্রামের বাড়ীর আনাচে কানাছে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইলে, এখানে সেখানে অসংখ্য খেজুর গাছ এখনো ভরপুর। শীতের আগমন অর্থাৎ হেমন্ত ঋতরু শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জনপদের গাছিরা (যে খেজুর গাছ কাটে) শুরু করে দেয় খেজুর গাছ কাটা। কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে অগ্রহায়ন, পৌষ, মাঘ এবং ফাল্গুনের শেষ পর্যন্ত এই রস সংগ্রহের অভিযান চলে। তবে পুরো পৌষ ও মাঘ মাসে ভরপুর রস পাওয়া যায়। অথচ এখন পৌষ মাস চলছে কিন্তু আগের সেই গাছিরাও নেই খেজুর গাছ কাটার লোকও যেন নেই।
লালমোহনে বর্তমানে খেজুরের রস যেন দুষ্প্রাপ্য বস্তু। আগে খেজুর গাছ কাটা গাছিদের হাঁক শোনা যেত এই খেজুর গাছ কাটবেন, রস নেবেন, ভাল রস। কিন্তু এখন আর তেমন করে হাঁক শোনা যায় না। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও রক্ষানাবেক্ষনের অভাবে এ সব ক্রমশঃ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। খেজুর গাছ থেকে সংগৃহীত রস দিয়ে গুড়, পাটালী তৈরী, পিঠা, পুলি পিঠা, পায়েস তৈরী করা হতো। খেজুর গাছ এমন এক প্রকার বৃক্ষ যার জন্য সঠিক কোনা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। প্রাকৃতিকভাবে এই গাছ যত্রতত্রভাবে বেড়ে উঠে। কোথাও বীজ ফেললেই অনাদরে অবহেলাতেই দ্রুত বেড়ে উঠে।
সড়কপথ, জমির আইল বা পতিত জমি, বাড়ীর আঙ্গিনা, পুকুরের পাড়ে খেজুর গাছ লাগানো যেতে পারে। এর জন্য তেমন বিশেষ কিছুর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু আন্তরিক সদিচ্ছা, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। এগুলোর সমন্বয় ঘটলে হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব। এতে আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। লালমোহন মঙ্গলসিকদার বাজার এলাকার নেয়ামত উল্যাহ গাছীর সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন খেজুর গাছ কাটা ও রস সংগ্রহ করা অনেক পরিশ্রমের বিষয়।
এখন মানুষ এত পরিশ্রম করে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে চায় না। এর চেয়ে কম পরিশ্রম করে অন্য কাজ করলে আরও বেশি টাকা পাওয়া যায়। তাই এই পেশা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি যারা এখনও দু’একজন খেজুর গাছ কাটে তারা রস চোরের সমস্যার কারনে তাও বন্ধ করে দিচ্ছে।