কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলবাসীর মাঝে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা, অর্থনৈতিক সঙ্কট আর পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকাকেই এর জন্য দায়ী করছেন পিছিয়ে পড়া এই জনপদের অবহেলিত মানুষজন।
দেশের সর্বশেষ উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। এই জেলার তিনদিকেই প্রায় ৩ কিলোমিটার ভারতীয় সীমানা বেষ্টিত। এছাড়াও দেশের বৃহত্তর সব নদ-নদী ব্রহ্মপুত্র, দুধকমুার, ধরলা ও তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদী রয়েছে এ জেলায়। এখানে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক ছোট-বড় চরাঞ্চল আছে। এরমধ্যে প্রায় আড়াই থেকে ৩ শতাধিক চরে মানুষের বসবাস।
জেলায় ৯টি উপজেলা, ৭৩টি ইউনিয়ন এবং ৩টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত হয়েছে ৪টি আসন। এখানে প্রায় ৬০/৬৫টি ইউনিয়ন নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেক ইউনিয়নের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। জেলার মোট ভোটার ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ২ জন।
আর প্রত্যন্ত ওইসব চরাঞ্চলে বসবাস করছে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ। অধিকাংশ চরাঞ্চলবাসীকে সারা বছরই নদী ভাঙনের স্বীকার হতে হয়। কৃষিনির্ভর জেলাতে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় বছরের বেশির ভাগ সময় বেকার থাকতে হয় মানুষকে। এছাড়া মৌসুম ভিত্তিক কাজ থাকলেও বছরের ৫/৬ মাস কাজ থাকে না দারিদ্র্যপীড়িত এই জনপদের মানুষের হাতে।
অবহেলিত এসব চরাঞ্চলবাসী নিজেদের পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারে না। ফলে রাজধানী, বগুড়া, চট্টগ্রাম, ফেনি, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ উন্নত শহরে ছোটেন কাজের সন্ধানে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মঙ্গা শব্দটি না থাকলেও এখনও এই জনপদে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগে পিছিয়ে জেলাবাসী।
সদর উপজেলার চর যাত্রাপুরের বাসিন্দা মজিবর (৩৫), আফজাল (২৮), লাইলী বেগম (৪২), রৌমারী উপজেলার ফুলুয়ার চরের বাসিন্দা হাসেম (৬০) ও গার্মেন্টস কর্মী শিউলি আক্তার (২৫) জানান, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে চরবাসীর তেমন কোনো মূল্যায়ন থাকে না। তারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোট শেষে আর দেখা মেলে না। তাই কর্মস্থল থেকে টাকা-পয়সা খরচ করে এসে ভোট দেয়ার ইচ্ছা থকে না।
অপরদিকে ঢাকায় বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহিদুর রহমান (৩৫) বলেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ছুটি পাওয়া যায়। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে।
বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মামুনুর রহমান (৩৬) জানান, কুড়িগ্রামের সঙ্গে বাস কিংবা রেল যোগাযোগ তেমন উন্নত না। কুড়িগ্রাম-ঢাকা যাওয়া আসা একদিন চলে যায়। অর্থ খরচও বেশি পড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠানে ছুটি পেলেও সার্বিক পরিস্থিতির জন্য ভোট দিতে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। সরকার আমাদের মতো যারা বাইরে থাকি তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করলে আমরাও ভোট প্রদান করে আমাদের মতামত দিতে পারব।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, নদী বেষ্টিত যাত্রাপুর ইউনিয়নে অনেক পরিবারই আছে তাদের কেউ না কেউ জেলার বাইরে গিয়ে কাজ করে। তারা অনেকেই ইউনিয়ন বা সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে আসে না। তাদের কাছে ভোট না সংসার চালানোটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। এতে করে অনেকেই ভোটকেন্দ্রে অনুপস্থিত থাকেন।
এই বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, ভোটার অনুপস্থিতিটা বেশি লক্ষ্য করা যায় ইউনিয়ন ভোটে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকায় অনুপস্থিতির প্রভাব তেমনটা পড়ে না। এছাড়াও ভোটারদের কর্মস্থলে অবস্থান করা, অসচেতনতা এবং মৃত ব্যক্তির নাম সময় মতো ভোটার তালিকা থেকে কর্তন না হওয়াকেও ভোটার অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে মনে করেন এই কর্মকর্তা।