,

ভূমি দখল করে মাটি বিক্রি করলেন আ’লীগ নেতা

জেলা প্রতিনিধি, ঢাকা: ঢাকার ধামরাইয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জবরদখলে অন্যের জমির ফসল নষ্ট করে মাটি কাটার লিক (রাস্তা) তৈরি ও জমির মাটি বিক্রি করলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল আলিম খান সেলিম।

ভুক্তভোগী শাহ মো. আলিম এর অভিযোগ তাদের না জানিয়েই ভুক্তভোগীদের জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন আলিম খান সেলিম। এছাড়াও লোকজন দিয়ে ভুক্তভোগীদের পিটিয়ে জুর করে আলিম খানের জমির মাটি বিক্রির জন্য ভুক্তভোগীদের জমির ফসল নষ্ট করে সেখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এতে তাদের প্রায় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তার দাবি।

এছাড়াও ভুক্তভোগীদের জমির দুই পাশে এমন ভাবে মাটি কাটা হয়েছে, যে কোন সময় তাদের জমি ভেঙে পড়ে যাবে। এবিষয়ে ভুক্তভোগীরা ধামরাই থানা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা হলেন, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার বানিয়ারা এলাকার শাহ মো. কহিনুর এর তিন ছেলে শাহ মোঃ আমিনুল ইসলাম আমিন (সৌদি প্রবাসী), শাহ মো. মমিনুল ইসলাম ও শাহ মোঃ আলিম এবং ধামরাই উপজেলার রাজাপুর এলাকার মৃত খন্দকার আশরাফুজ্জামান এর ছেলে খন্দকার মামুনুর রশিদ। মামুনুর রশিদ ও আমিনুল ইসলাম আমিনরা মামাতো- ফুপাতো ভাই।

অভিযুক্ত ব্যাক্তি হলেন, ধামরাইয়ের রাজাপুর এলাকার মৃত আব্দুল হালিম খান এর ছেলে আব্দুল আলিম খান সেলিম। তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজাপুর পূর্বপাড়া কবর স্থানের সামনে রাজাপুর মৌজায় অভিযুক্ত আব্দুল আলিম খান সেলিমের ১১৯ শতাশ জমি রয়েছে। এই ১১৯ শতাংশ জমির মাঝখানের ৪১ শতাংশের প্লটটি অভিযোগকারী মো. আলিমের বড় ভাই সৌদি প্রবাসী শাহ মোঃ আমিনুল ইসলাম আমিনের। তিনি ক্রয় সূত্রে এই ৪১ শতাংশ জমির মালিক। আলিম খান তার নিজের জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে পুকুর তৈরি করে সামিয়া এগ্রো ফিসারিজ নামের একটি প্রজেক্ট চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার মোট ১১৯ শতাংশ জমির মাঝ খানের জমিটি সৌদি প্রবাসীর ৪১ শতাংশ জমি থাকায় প্রজেক্ট করা সম্ভব ছিলো না। পরে তিনি সেই ৪১ শতাংশ জমি ক্রয়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

আরো জানা যায়, জমি ক্রয়ে ব্যর্থ হইয়ে আলিম খান তার নিজের ১১৯ শতাংশ জমিসহ ওই সৌদি প্রবাসীর ৪১ শতাংশ মোট ১৬০ শতাংশ জমির মাটি ২৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন ধামরাইয়ের বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা এলাকার মোঃ নাহিদ নামের এক মাটি ব্যবসায়ীর কাছে। আলিম খানের কাছ থেকে ১৬০ শতাংশ জমির মাটি ও বালি ২৮ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয়ের বিষয়টি নাহিদ এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সৌদি প্রবাসী আমিনুর ইসলাম আমিন এর ৪১ শতাংশ জমিতে উন্নত মানের টমেটো চাষ করেছেন প্রবাসীর মামাতো ভাই ও রাজাপুর এলাকার খন্দকার মামুনুর রশিদ। জমির এক পাশের টমেটো গাছ উঠিয়ে সেখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করে আলিম খানের জমি থেকে মাটি বিক্রি করা হয়েছে। এবং সৌদি প্রবাসীর জমির দুই পাশ থেকে আলিম খানের জমির মাটি এমন ভাবে কেটে নেয়া হয়েছে যেনো কয়েক দিন পর একাই প্রবাসীর জমি ভেঙে পরে।

সৌদি প্রবাসী শাহ মো. আমিনুর ইসলাম আমিনের মামাতো ভাই ও ওই জমিতে টমেটো চাষ করা যুবক খন্দকার মামুনুর রশিদ জানান, আমিসহ আরো কয়েকজন মিলে এই জমিতে উন্নত মানের টমেটো চাষ করেছি। সেই টমেটোর গাছ উঠিয়ে রাস্তা তৈরি করে আলিম খানের জমির মাটি বিক্রি করেছে। এতে আমাদের প্রায় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ইউএনও স্যার স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন এলাকায় বসে আমাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দেয়ার জন্য। কিন্তু আলিম খান চেয়ারম্যানের কোন কথা মানতে রাজি না।

অভিযোগকারী শাহ মো. আলিম বলেন, ওই জমি আমার ভাই সৌদি প্রবাসীর। কিন্তু আমাদের না জানিয়েই আমার ভাইয়ের জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন আলিম খান। আমরা বাঁধা দিলে লোকজন দিয়ে আমাদের মারধর করে জমি থেকে তারিয়ে দেয়। পরে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিলে আমাদের জমির মাটি কাটা বন্ধ হয়। কিন্তু আমাদের জমির দুই পাশেই এমন ভাবে আলিম খানের জমির মাটি কাটা হয়েছে যে কোনো সময় আমাদের জমি ভেঙে পড়বে।

এই জমির মাটি ক্রয় করা ব্যবসায়ী মোঃ নাহিদ বলেন, আমি ২৮ লাখ টাকা দিয়ে ১৬০ শতাংশ জমির মাটি স্ট্যাম্প করে ক্রয় করেছি আলিম খান সেলিমের কাছ থেকে। কিন্তু এখন মাঝখানের ৪১ শতাংশ জমির মাটি কাটতে পারছি না। আমার নিজেরই তো ক্ষতি হচ্ছে।

এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. আব্দুল আলিম খান সেলিমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

চৌহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভীন হাসান প্রীতি বলেন, আমি চেষ্টা করেছি দুই পক্ষকে নিয়ে বসার জন্য। কিন্তু আব্দুল আলিম খান সেলিম তিনি বসতে রাজি না। তিনি বসতে না চাইলে এখানে আমার কিছু করার নাই।

ভুক্তভোগীদের মারধরের পর তারা ধামরাই থানায় অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগের তদন্তের দ্বায়িত্বে থাকা ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিউটন মৃধা জানান, এঘটনায় আমি সেলিম খানকে বলেছিলাম আপনি এলাকার সম্মানিত লোক। এবিষয়ে ঝামেলা না করে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করে ফেলেন। কিন্তু তারা আর বসে নাই। ভুক্তভোগীরা পরে ইউএনও, এসিল্যান্ড বরাবর অভিযোগ করেছে।

ধামরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার বলেন, কোন কিছু জানার থাকলে লিখিত ভাবে জানান। কারণ অনেক ঘটনা তো, মোবাইল ফোনে বলা সম্ভব না।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, মাটি কাটা বন্ধ আছে এখন। স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার কথা বলা হয়েছিলো। অভিযোগ নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত মাটি কাটা বন্ধ থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর