আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কৃষকদের সঙ্গে মোদি সরকারের টানাপোড়েন চরমে উঠল। দিল্লি ঘিরে বসে থাকা কৃষকদের কোনো দাবি মানতে রাজি নয় সরকার। কৃষি আইন বাতিল করা তো দূরের কথা, সরকার নূ্যনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিয়ে আইনও করার দাবি খারিজ করে দিয়েছে। কোনো দাবিই মানা হচ্ছে না দেখে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে কৃষক সংগঠনগুলো আজ মঙ্গলবার ভারতজুড়ে বন্ধের ডাক দিয়েছে।
তাদের সমর্থন করছে কংগ্রেস, এনসিপি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, ডিএমকে, আম আদমি পার্টিসহ মোট ১৮টি বিরোধী দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস কৃষকদের দাবি সমর্থন করলেও বন্ধ সমর্থন করছে না। কারণ, তারা নীতিগতভাবে বন্ধের বিরোধী। খবর এনডিটিভি ও ডয়চে ভেলের।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আজ সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ভারতজুড়ে বন্ধ পালন করবেন কৃষকরা। ঘুরবে না গাড়ির চাকা। ট্রেন চলাচলও বিঘ্নিত হবে। বড় বড় সবজির বাজার বন্ধ থাকবে। সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীও কৃষকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
বন্ধে সমর্থন দেওয়া বিরোধী দলগুলোর কঠোর সমালোচনা করেছে বিজেপি। ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ বলেছেন, বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে একই আইন করত। এখন তারা নির্লজ্জের মতো কৃষক আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে।
কৃষক আন্দোলনে সমর্থন বিদেশ থেকেও আসছে। লন্ডনে কৃষকদের সমর্থনে প্রবাসী ভারতীয়রা বড় ধরনের বিক্ষোভ করেছেন। নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশেও বিক্ষোভ হয়েছে। বিদেশ থেকে সমর্থন পেয়ে কৃষকরা আরও উজ্জীবিত।
নতুন তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে টানা ১২ দিন ভারতে কৃষক আন্দোলন চলছে। কৃষি খাতে করপোরেট পুঁজি বিনিয়োগ অবাধ করার প্রতিবাদে এবং এই আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকরা ফুঁসে উঠেছেন। বন্ধের বিষয়ে গতকাল সোমবার ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ তিকাইত বলেন, এই বন্ধের মাধ্যমে আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, তাদের অনেক নীতির সঙ্গে আমরা একমত নই।
এদিকে, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবও কৃষক আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। গতকাল কৃষক যাত্রা করে কনৌজের কৃষকদের কাছে যেতে চেয়েছিলেন। লক্ষেষ্টৗতে নিজ বাড়ির পাশেই তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। তিনি সেখানেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাকে আটক করে পুলিশ।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অবশ্য দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় গিয়ে বিক্ষোভরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে আন্দোলনে আম আদমি পার্টির সমর্থনের কথা স্পষ্ট করে দেন তিনি।
রাজধানী দিল্লি ও হরিয়ানার সীমান্তে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন কৃষকরা। দিল্লি এখন সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। দিল্লিতে কৃষকদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না নিরাপত্তা বাহিনী। কৃষকদের শীত উপেক্ষা করে রাস্তা, ফ্লাইওভারের নিচে থাকতে হচ্ছে।
সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হলেও সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি। আইনের পক্ষে অনড় মোদি সরকার। কৃষকদের দাবি, এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে তারা বন্ধ ডেকেছেন। আজ সড়ক ও রেল অচল করে দিতে পারেন কৃষকরা। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর তারা। দিল্লিতে ট্যাক্সি ও অটোচালকদের কয়েকটি ইউনিয়ন বন্ধে শামিল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে দিল্লির অভ্যন্তরের রাস্তায় অটো ও ট্যাক্সি নাও চলতে পারে। এরই মধ্যে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় বন্ধে ভালো সাড়া পড়েছে। আজও সেখানে পরিস্থিতি উত্তাল হতে পারে। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মোট কথা, বন্ধের আগের দিন সরকার ও কৃষক, উভয় পক্ষেরই প্রস্তুতি তুঙ্গে।