জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুর: বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফরিদপুরের ভাসমান সেতু দেখতে মানুুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন মঙ্গলবার (৩ মে) দুপুর থেকেই সেতু এলাকায় ভিড় জমাতে শুরু করে হাজারও দর্শনার্থী।
এলাকাবাসী জানান, আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের মধুমতি নদীর বাওড়ের ওপর স্থানীয় কয়েক গ্রামের মানুষ নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করেছেন ভাসমান সেতুটি। সেতুটি উন্মুক্ত করার পর ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোর মানুষের কাছে সেতুটি বিনোদন কেন্দ্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার শুধু ভাসমান সেতুই নয়, ঈদ উপলক্ষে ফরিদপুরে ধলার মোড়, এলানখালী শেখ হাসিনা সেতু, ভাঙ্গা হাইওয়ে এক্সপ্রেস, মধুখালীর চঁরবাশপুরের মুজিব শতবর্ষ পার্কসহ বেশ কয়েকটি স্থানের বিনোদনকেন্দ্রে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
এছাড়া অত্র এলাকায় ভালো কোনো বিনোদনকেন্দ্র না থাকায় ভাসমান সেতুটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেতুটি ঘিরে গড়ে ওঠেছে দোকানপাট, ভাসমান ফুর্ড কর্ণারসহ স্থায়ীভাবে নানা ধরনের খাবারের দোকান।
মো. রাকিব হোসেন। মাগুরার মোহাম্মদপুর থেকে আসেছেন সেতু দেখতে। তিনি বলেন, ভাসমান সেতুটির কথা মানুষের মুখে শুনেছি। করোনার কারণে আসতে পারিনি। তাই ঈদের দিন স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ভালোই লেগেছে। ছবি তুলেছি।
মধুখালী থেকে আসা মাজেদা খাতুন বলেন, সেতু দেখতে আসার ইচ্ছে ছিল। সময় পাচ্ছিলাম না, তাই ঈদের দিন সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছি। ঘুরতে। ভালোই লেগেছে।
নড়াইল থেকে আসা সাদমান হোসেন বলেন, অনেকবার আসবো বলে চিন্তা করলেও আসা হয়নি। ভেবেছিলাম ঈদের দিন সেতু দেখতে যাবো। সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, তারপরও মন মানলো না, বৃষ্টির মধ্যেই চলে এসেছি। ঈদের আমেজে একটু বৃষ্টিতে ভেজাও হলো সেতু দেখাও হলো।
নগরকান্দার বাসিন্দা স্কুলছাত্রী সায়েমা আক্তার বলেন, ঈদের দিন বৃষ্টি উপেক্ষা করে মায়ের সঙ্গে সেতু দেখতে চলে এলাম। তবে বৃষ্টির কারণে একটু ঘুরতে সমস্যা হয়েছে।
টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইমাম হাসান শিপন জানান, এ অঞ্চলে একটি কলেজ, দুটি উচ্চবিদ্যালয়, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও পোস্ট অফিস রয়েছে। নানা প্রয়োজনে মানুষকে এখানে আসতে হয়। বহু আবেদন করেও ওই স্থানে কোনো সেতু নির্মাণ না হওয়ায় আমরা টিটা খেয়াঘাট এলাকায় টিটা, টিটা পানাইল, পানাইল, শিকারপুর, ইকরাইল ও কুমুরতিয়া গ্রামের লোকজন মিলে চারটন ক্ষমতাসম্পন্ন সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিই।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক বলেন, বিনোদনকেন্দ্রটিতে সর্বদা নজর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বজায় রাখতে পুলিশি মোতায়ের করা হয়েছে।
আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. সাইফুর রহমান সাইফার বলেন, করোনাকালীন সময়ে এখানে একেবারেই লোকশূন্য ছিল। এবার ঈদে উপচেপড়া ভিড় ছিল।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, এলাকাবাসীর ভোগান্তি লাঘবে হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে অত্র এলাকা ও দূর-দরান্ত থেকে আসা অসংখ্যক মানুষের পদচারণায় ভাসমান সেতুটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ খতে আসেন। এটি একটি বিনোদনের স্পট হিসেবে পরিণত হয়েছে।
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ভাসমান সেতু দেখতে অনেক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের নজরদারি রয়েছে।