বিডিনিউজ ১০, স্বাস্থ্য ডেস্ক: একটি নতুন গবেষণায় বিষণ্নতার সঙ্গে পরিপাকতান্ত্রিক সমস্যার যোগসূত্রের ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। নতুন গবেষণাটি বলছে যে, যেসব লোক বিষণ্নতায় ভুগেন তাদের পরিপাকতান্ত্রিক বিশৃঙ্খলা হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি, কারণ উভয় দশা-ই নিউরনের সেরোটোনিন ঘাটতি দ্বারা প্ররোচিত হয়। এ গবেষণাটি ইঁদুরের ওপর চালানো হয়েছিল, যা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় পাওয়া গেছে, অন্ত্রের নিউরনে সেরোটোনিনের ঘাটতি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের ঘাটতি বিষণ্নতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। গবেষণাটি আরো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, অন্ত্র ও মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে এমন চিকিৎসার মাধ্যমে উভয় দশা-ই উপশম করা সম্ভব হতে পারে।
বিষণ্নতায় ভোগা এক-তৃতীয়াংশ লোকের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য পাওয়া গেছে। কিছু গবেষণার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিষণ্ন লোকেরা অভিযোগ জানিয়েছেন যে তাদের কোয়ালিটি অব লাইফ ব্যাহত হওয়ার অন্যতম সর্বাধিক বড় ফ্যাক্টর হলো আন্ত্রিক কাঠিন্যতা।
তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্যে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট বা পরিপাকতান্ত্রিক নালিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, যা অসহনীয় ব্যথার উদ্রেক করে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতিবছর এ দশা নিয়ে ২.৫ মিলিয়ন লোক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় এবং ১০০,০০০ লোক হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এ গবেষণার প্রধান কারা গ্রোস মারগোলিস বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত বিষণ্নতায় ভোগা অনেক রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন, কিন্তু যারা সীমিত চিকিৎসায় পড়ে থাকেন তারা উল্লেখযোগ্য পরিপাকতান্ত্রিক সমস্যায় ভুগেন।’ অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যকার সাদৃশ্যতা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে উভয় দশার সঙ্গে একটি কমন কারণের যোগসূত্র রয়েছে।
ডা. মারগোলিস বলেন, ‘অন্ত্রকে প্রায়শ দ্বিতীয় মস্তিষ্ক বলা হয়। এটাতে স্পাইনাল কর্ডের চেয়েও বেশি নিউরন থাকে এবং মস্তিষ্কের মতো একই নিউরোট্রান্সমিটার ব্যবহার করে। তাই একই প্রক্রিয়ায় উভয় দশার আবির্ভাব হলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।’
যেহেতু মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের নিম্ন মাত্রার সঙ্গে বিষণ্নতার যোগসূত্র পাওয়া গেছে এবং অন্ত্রের নিউরনও সেরোটোনিন ব্যবহার করে, তাই গবেষকরা ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে এটা জানতে চেয়েছেন যে অন্ত্রের সেরোটোনিন ঘাটতি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভূমিকা রাখে কিনা।
গবেষণায় ব্যবহৃত ইঁদুরদের মধ্যে একটি জেনেটিক মিউটেশন (এর সঙ্গে মানুষের জেনেটিক মিউটেশনের মিল পাওয়া গেছে, যা তীব্র বিষণ্নতা সৃষ্টি করে) ছিল, যা মস্তিষ্ক ও অন্ত্রে নিউরনের সেরোটোনিন উৎপাদন ক্ষমতাকে খর্ব করে।
গবেষকরা পেয়েছেন যে অন্ত্রের সেরোটোনিন ঘাটতি অন্ত্রের নিউরনের সংখ্যা হ্রাস করে, যার ফলে অন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে এবং গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের মধ্যে কনটেন্টের চলাচল ধীর হয়েছে।
ডা. মারগোলিস বলেন, ‘ইঁদুরগুলোর কোষ্ঠকাঠিন্য ছিল এবং তাদের মধ্যেও তেমন পরিপাকতান্ত্রিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে যা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা লোকদের মধ্যে হয়ে থাকে।’
এ গবেষণার দুজন সহলেখক হলেন মার্ক ক্যারন ও জ্যাকব জ্যাকবসেন, যারা একটি এক্সপেরিমেন্টাল ড্রাগ উদ্ভাবন করেন। এ ড্রাগটি ইঁদুরগুলোর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এবং ফলাফল ছিল আশাব্যঞ্জক- ইঁদুরগুলোর অন্ত্রের নিউরনে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম হয়েছিল।
এ চিকিৎসা ছিলো ৫-হাইড্রোক্সিট্রাইপ্টোফ্যান বা ৫-এইচটিপি’র (একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড যা আপনার শরীরে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয় এবং আপনার শরীর সেরোটোনিন উৎপাদন করতে এটি ব্যবহার করে- সেরোটোনিন হলো একটি রাসায়নিক বার্তাবাহক যা স্নায়ুকোষের মধ্যে সংকেত পাঠায়) ধীর সরবরাহ, যা প্রাপ্তবয়স্ক ইঁদুরের মধ্যে নিউরনের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।
মস্তিষ্ক ও পরিপাকতান্ত্রিক সমস্যার মধ্যে এ যোগসূত্র গবেষকদের আশাবাদী করেছে যে, নতুন ৫-এইচটিপি’র ধীর সরবরাহ থেরাপি একই সময়ে মস্তিষ্ক ও অন্ত্রের সমস্যা নিরাময় করতে পারে।
এটি হলো অন্যতম প্রাথমিক গবেষণা যা গবেষকদের আশাবাদী করেছে যে, মানুষের অন্ত্রে নিউরোজেনেসিস বা নিউরন উৎপাদন করা ও অন্ত্রের অস্বাভাবিকতা সংশোধন করা সম্ভব হতে পারে। ডা. মারগোলিস বলেন, ‘অনেক বছর ধরে আমরা জানি যে মস্তিষ্কের কিছু অংশে নিউরোজেনেসিস ঘটে, কিন্তু অন্ত্রের স্নায়ুতন্ত্রেও যে এটা ঘটে তার ধারণা কিছুটা নতুন।’
অন্যান্য ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়েও নিউরোজেনেসিস সহায়ক হতে পারে। ডা. মারগোলিস বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিপাকতান্ত্রিক নিউরনের সংখ্যা কমে যায় এবং মনে করা হয় যে এটি হলো বয়স্কদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি কারণ। ধীর সরবরাহ থেরাপি ৫-এইচটিপি’র ধারণাটি নতুন নিউরনের প্রয়োজন পড়বে এমন দশার চিকিৎসা করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
গবেষকরা ইতোমধ্যে পরিকল্পনা করেছেন যে, চিকিৎসায়ও ভালো হয় না এমন বিষণ্ন রোগীর ওপর এ পরীক্ষা চালাবেন। এর উদ্দেশ্য হলো এসব রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয় কিনা তা যাচাই করা।
তথ্যসূত্র : এনডিটিভি