,

বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া প্রথম দফার ভোট শান্তিপূর্ণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পড়ল শনিবার। এই হিসেব বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তার পরেও ভোট হয়েছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত শতকরা ভোটের চূড়ান্ত হিসেব কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

রাজ্যের প্রথম দফার এই ভোটে জঙ্গলমহলের মানুষ দলে দলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে ভোট দিয়েছেন বলে এ দিন কমিশন জানিয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের ৩০টি কেন্দ্রের এই ভোটের হার নিয়ে কমিশন খুশি। বেশ কিছু অভিযোগ এলেও বড় কোনও হিংসার ঘটনা এ দিন ঘটেনি। কমিশনের কাছে মোট ৬২৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে। রাজ্যের মুখ্য নিবার্চনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাব বলেন, ‘‘বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া প্রথম দফার ভোট শান্তিপূর্ণ।’’ খবর আনন্দ বাজারের

যদিও সকাল থেকে এ দিন ইভিএম নিয়ে অভিযোগ আসতে শুরু করে। দক্ষিণ কাঁথির মাজনায় ‘ইভিএম’-এ কারচুপির অভিযোগ ওঠে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মাজনার বুথে ইভিএম যন্ত্রে তৃণমূলে ভোট দিলেও দেখা যাচ্ছে ভোট পড়ছে বিজেপিতে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকেরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেই কারণে কিছু ক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে ফের ভোটগ্রহণ শুরু করে। মাজনার ঘটনার প্রেক্ষিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর সদরের প্রচার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিজেপির বিরুদ্ধে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগও তোলেন।

মাজনার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, ভিভিপ্যাট থেকে ভোটার স্লিপ বেরোনো নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তা সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলা হয়। তৃণমূলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিইও বলেন, ‘‘অভিযোগ করার অধিকার সকলের আছে।’’ ভগবানপুরের অর্জুননগরের ২০৫ নম্বর বুথেও ভোটিং মেশিনে তৃণমূলের প্রতীকযুক্ত স্লটে রঙ প্রয়োগের অভিযোগ আসে। তার তিরও বিজেপির দিকে। পুরুলিয়ার ন’টি ও বাঁকুড়ার চারটি কেন্দ্রে ইভিএম বিভ্রাটে ভোট-প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোথাও ভোটগ্রহণের শুরুতে, কোথাও মাঝপথে আবার কোথাও ভোট-পর্বের শেষেও ইভিএম বিগড়েছে বলে অভিযোগ।

এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে সিপিএম প্রার্থী সুশান্ত ঘোষের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। সুশান্তের দাবি, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি যোগসাজশ করেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।’’ সিইও-র দফতরে এসে এই ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছেন সিপিএম নেতা রবীন দেব। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। যদিও দল থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথিতে সৌমেন্দু অধিকারীর গাড়িতেও হামলার অভিযোগ ওঠে এ দিন। সিইও দফতর জানিয়েছে, ওই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ভোটে অশান্তির জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে ১০ জনকে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডুমুরজলায় বলেন, ‘‘এ দিন প্রথম দফার খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। যে সব জায়গায় গত লোকসভা ভোটে জিতেছি, এ দিন সব ভোকাট্টা হয়ে গিয়েছে। বিজেপির জোচ্চুরির ফ্যাক্টরি মানুষই গুটিয়ে দেবে।’’এ দিন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে যান তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের আট সাংসদ। সুদীপ বলেন, ‘‘জনগণই তৃণমূলের শক্তি। সেই শক্তিই যে প্রয়োগ হচ্ছে, তা ২ মে বোঝা যাবে।’’

রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পেরেছেন। বাকি ১০ শতাংশ ক্ষেত্রেও যাতে পরের দফা থেকে অশান্তি না হয়, তাই আমরা কমিশনকে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার অনুরোধ করেছি।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ছাপ্পা করতে না পেরে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দোষারোপ করছে তৃণমূল। খেজুরি, পুরুলিয়ায় ভোটারদের ভয় দেখানো হয়েছে। বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণ। জঙ্গলমহল থেকে পরিবর্তন শুরু হবে। প্রথম দফার ৩০টি আসন বিজেপি পাচ্ছে।’’

এক সময়ে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের যে প্রভাব ছিল, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে তা আর নেই। ফলে, এর আগের বিভিন্ন নির্বাচনে সব সময়ে ভোট না দেওয়ার যে হুমকি থাকত মাওবাদীদের তরফে, এ বার তা ছিল না। ভোট না দেওয়ার আর্জি জানিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু পোস্টার পড়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাকে যে আমজনতা বিশেষ আমল দেননি, তা ভোটদানের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেই মালুম হয়েছে। যে ভাবে এ দিন জঙ্গলমহলে সকাল থেকে লম্বা লাইন দিয়ে মানুষ ভোট দিয়ে গিয়েছেন, তা ২০১৬ সালেও দেখা যায়নি বলে প্রশাসনের একাংশ জানিয়েছে।

তবে, বেশ কিছু এলাকা থেকে গন্ডগোলের খবর আসে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির বেগমপুর এলাকায় এক বিজেপি সমর্থকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। সিইও বলেন, ‘‘মঙ্গল সরেন নামে ওই ব্যক্তির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।’’

পূর্ব মেদিনীপুরেও সকাল থেকে গন্ডগোলের বিচ্ছিন্ন খবর আসতে শুরু করে। খেজুরির কামদেবনগরে তৃণমূল-বিজেপি হাতাহাতির ঘটনায় আটক হন দুই বিজেপি কর্মী।

আবার উত্তর কাঁথির বাথুয়াড়িতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নন্দ মাইতিকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। উত্তর কাঁথির পঁচিশবেটিয়ায় বিজেপির নেতার মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর রগড়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।

এই বিভাগের আরও খবর