,

বরগুনায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি

জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা: বরগুনার আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়ী হওয়ায় চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকানকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরগুনার যুগ্ম জেলা জজের প্রথম আদালত ও উপজেলা নির্বাচনের ট্রাইব্যুনালের বিচারক আল মামুন এই রায় দেন।

একইসঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শামসুদ্দিন আহম্মদ ছজুকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে নির্বাচন কমিশনকে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত বরগুনার আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে অংশগ্রহণ করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম সরোয়ার ফোরকান।

পরে ঋণখেলাপির দায়ে ফোরকানকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছজুকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণার জন্য ওই বছরের ২১ এপ্রিল আদালতে মামলা দায়ের করেন ছজু।

আদালত সব তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ফোরকানকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছজুকে আমতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা করে আদেশ দেন। মামলার রায়ে আগামি ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ফোরকানকে আমতলী উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছজুকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনকে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর রূপালী ব্যাংকের শাখা থেকে নিজ নামে এক বছর মেয়াদে ১৮ লাখ টাকা ঋণ তোলেন ফোরকান। যা সুদে-আসলে ২৪ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।

এছাড়াও নিজের মালিকানাধীন বনানী ট্রেডার্সর নামেও এক বছরের মেয়াদে ঋণ তোলেন গোলাম সরোয়ার ফোরকান। যা সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখে। যথাসময়ে এই ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকা নাম ওঠে গোলাম সরোয়ার ফোরকানের।

২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মনোনয়নপত্রে গোলাম সরোয়ার ফোরকান তার ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এরপর নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি।

এ বিষয়ে শামসুদ্দিন আহমেদ ছজুর আইনজীবী অ্যডভোকেট জগদীশ চন্দ্র শীল বলেন, ‘গোলাম সরোয়ার ফোরকান ২০১৩ সালে তার নিজ নামে এবং তার মালিকানাধীন বনানী ট্রেডার্সের নামে এক বছর মেয়াদে পটুয়াখালীর রূপালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ঋণ তোলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে তিনি ঋণ পরিশোধ না করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তার ঋণের অনুকূলের শতভাগ সুদ মওকুফের জন্য রূপালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর এক বছরের মধ্যে প্রদানের জন্য ৮০ ভাগ সুদ মওকুফ করেন। এটাকাও তিনি যথাসময়ে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন।’

আইনজীবী আরও বলেন, ‘গোলাম সরোয়ার তার ঋণ খেলাপির এসব তথ্য গোপন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন। পরে আমার মক্কেল নিজেকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি করে ফোরকানেরকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত আজ এ রায় দেন।’

চেয়ারম্যানের থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি ফোরকান। তবে ছজু জানান, তিনি সকল প্রমান নিয়েই মামলা করেছেন। সত্যের জয় হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেন, ‘আদেশের বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে আদালদের আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পরে কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর