,

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের সাক্ষাৎ

বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সোমবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সাক্ষাতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রাইজার্ড জারনেকি নয় সদস্যবিশিষ্ট এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্য হলেন- এলিনা থিওচ্যারউস, ক্রিস্টেল লেটার্ড, নিকোলাই বেরকভ এবং পোলিশ সংসদের সদস্য আগনিস্কা সিগেজ।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আসন্ন নির্বাচন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রোহিঙ্গা ইস্যু, সেইসঙ্গে আর্থসামাজিক বিষয়সহ নানা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কেবল আগামী নির্বাচন নিয়েই কৌতূহলী ছিলেন না উপরন্তু, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক, আঞ্চলিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় কর্মসূচি এবং অন্যান্য বিষয়েও আগ্রহ দেখান।

আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, স্বচ্ছতার সাথে ভোটগ্রহণের জন্য স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স এবং ভোটারদের ছবিসহ ভোটার তালিকা সংযোজন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘকাল বাংলাদেশে সামরিক শাসন বলবৎ ছিল এবং আমরা দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতষ্ঠা করেছি।

প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত এবং চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলকথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন অনুযায়ী, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলেও তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় আছে। ভারত এবং চীন আমাদের উন্নয়ন সহযোগী।

তিনি ভারত, ভূটান এবং নেপালের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের চুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারকরণে বিসিআইএম (বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার) প্রক্রিয়ার সঙ্গেও নিজেকে জড়িত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার প্রথম মেয়াদে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ায় প্রশংসা করে বলেন, বর্তমানে ইউরোপ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রফতানি বাজার এবং বহু ইউরোপীয় দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে।

বাংলাদেশ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয় কর্মসূচি সম্পর্কে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের জানার আগ্রহের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বলেন, এই কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সকল ধর্মের আবাসভূমি এবং তারা এখানে শান্তি এবং সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছে। বাংলাদেশে ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত হলেও এখানে ধর্মীয় উৎসব সকলে একসঙ্গে উদযাপন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে একদা কিছু লোক ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চেয়েছিল কিন্তু সরকারের এসবের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে তারা সফল হতে পারেনি।

রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ছোট, যেখানে প্রায় ১০ লাখের ওপর শরণার্থীকে আশয় প্রদান করা হয়েছে। মিয়ানমার তাদের ফেরত নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।

তিনি বলেন, তার সরকার নারীদের রাজনীতি, প্রশাসন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করার জন্য নীতিমালা বাস্তবায়ন করছে, এখন নারীরা সকল জাতীয় এবং সামাজিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি ক্রীড়াক্ষেত্রেও তাদের দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে শতকরা ৬০ ভাগ নারীদের থেকে নিয়োগ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকারের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে জনগণের জন্য সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা। যাতে করে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

প্রেস সচিব বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়শী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, আপনি নারীর ক্ষমতায়নের একটি দৃষ্টান্ত।

ড. হাছান মাহমুদ এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর