,

প্রচারণা শেষ আগামীকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা আগামীকাল শুক্রবার শেষ হচ্ছে। এদিন সকাল ৮টার পর আর কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না।

এদিকে শেষ সময়ে শতাধিক আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচারণা। প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনি উত্তাপও বাড়ছে। গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

নানামুখী হিসাব নিকাশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন কোনো কোনো প্রার্থী। তবে দুই শতাধিক আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

এদিকে যেখানেই অনিয়ম, সেখানেই অ্যাকশন নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। ভোটের দিনও যদি কেউ অনিয়ম করে, আমরা ভোট বন্ধ করে দেবো। আমরা এমন কোনো নির্বাচন করতে চাই না, যেটা আবার নতুন করে দেশকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে। একটা নির্বাচন হবে; যে সরকারই হোক না কেন, যেন সরকার স্থায়ী রূপ নেয়।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২৯৯ আসনে ১ হাজার ৯৭০জন প্রার্থী নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করছেন ১৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন। এছাড়া নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রচার-প্রচারণা চলবে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যেই ভোটের দিন উপলক্ষে ওইদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৬টি রাজনৈতিক দল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে মাঠে রয়েছে।

শতাধিক আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস: এদিকে শেষ সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। তবে সব নির্বাচনী আসনে এই চিত্র নেই। প্রায়  ২২০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হবে নৌকার। এর মধ্যে শতাধিক আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বাকি দুই শতাধিক আসনে রিলাক্স মুডে আছেন নৌকার প্রার্থীরা। ভোটের মাঠে রাত-দিন বিবেচনায় না নিয়ে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তারা।

মিছিল, সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠকসহ নানাভাবে গণসংযোগে ব্যস্ত রয়েছেন তারা। এসব কর্মসূচিতে একে অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হচ্ছেন অনেকে। কোথাও কোথাও সহিংসতায় জড়াচ্ছেন প্রার্থীর সমর্থকরা। নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক শোকজ, তলব, সতর্ক ও জরিমানার পরও প্রার্থীদের বাগে আনতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন বেপরোয়া প্রার্থীরা। এসব অভিযোগে গতকালও কয়েকজন প্রার্থী ও তাদের সমর্থককে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।

প্রচারণায় সংঘাত-সংঘর্ষ-কোন্দল : বরিশাল-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী একে ফাইয়াজুল হক রাজুর নির্বাচনী মিছিলে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় নৌকার সমর্থকরা ১৬টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। এছাড়া মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয় বলে জানা গেছে। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নে নৌকার ক্যাম্পে হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। নেত্রকোনা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল ইসলামের নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পাবনার সাঁথিয়ায় আওয়ামী লীগ-স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে, নওগাঁ-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে কুপিয়ে জখম, নাটোরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরসহ আরও কয়েকটি জেলায় সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত তিন জন নিহত এবং বহু সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হন।

এদিকে গতকাল বুধবার নৌকায় ভোট দিলে ভোটারদের পিষে ফেলার ঘোষণা দেওয়া বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশীদ কিরনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। বিকেলে বেগমগঞ্জের নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়ে সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেন তিনি।  এ ঘটনায় বেগমগঞ্জ বিসিক শিল্প এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশীদ কিরণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহসহ ১৫ জন নেতাকে অব্যাহতি দেন। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার ও অবাঞ্চিত ঘোষণায় এ আসনে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সরে দাঁড়ালেন জাপার আরও পাঁচ প্রার্থী: নানামুখী চাপের মুখে নির্বাচনের পাঁচদিন আগে ভোটের মাঠ থেকে গতকাল সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) আরও পাঁচজন প্রার্থী। তারা হলেন-সুনামগঞ্জ-১ আসনের আবদুল মান্নান তালুকদার, হবিগঞ্জ-২ আসনের শংকর পাল, দিনাজপুর-২ আসনের মাহবুব আলম, টাঙ্গাইল-৭ আসনের জহিরুল ইসলাম ও গাজীপুর-৪ সামসুদ্দিন খান। কেউ কেউ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অসহযোগিতা, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ এবং চাপ ও হুমকির কথা জানিয়েছেন।

৫৮৯টি শোকজ ও তলব :নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তাদের সমর্থকদের এ পর্যন্ত ৫৮৯টি শোকজ ও তলব নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১৩১টি এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বনিম্ন ২১টি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাবে এ পর্যন্ত ৩৮৪জন প্রার্থী ও তাদের সমর্থক অনুসন্ধান কমিটির কাছে সরাসরি অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

‘দেশটা সংকটের মধ্যে পড়ুক, এমন নির্বাচন চাই না’:দেশটা সংকটের মধ্যে পড়ুক আমরা এমন নির্বাচন করতে চাই না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা। গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় না যায়, আমরা আগেও দেখেছি, ১৯৯৬ সালে কোনো একটা আন্দোলন-টান্দোলনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচন হয়েছিল। তারপর কিন্তু সে নির্বাচনটা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে আবারও অল্প দিনের ব্যবধানে কিন্তু আবারও একটা নির্বাচন হয়ে গেছে। আমরা এমন কোনো নির্বাচন করতে চাই না, যেটা আবার নতুন করে দেশকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে। এমন নির্বাচন হবে; যে সরকারই হোক না কেন, যেন সরকার স্থায়ী রূপ পায়।

বিদেশি ১৮৬ পর্যবেক্ষক-সাংবাদিককে ইসির অনুমোদন: নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ১৮৬ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন গণমাধ্যমকর্মী। গতকাল ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক-সাংবাদিকদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু বিদেশি পর্যবেক্ষকের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সব মিলিয়ে দুই শতাধিকের বেশি অনুমোদন পাবে বলে জানান তিনি।

শুক্র-শনি ব্যাংক খোলা: নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে ভোটের আগের দুই দিন (শুক্রবার ও শনিবার) তপসিলি ব্যাংকগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বুধবার ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পাঠান।

নারী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দাবি :নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের নারী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানিয়েছে মহিলা পরিষদ। গতকাল বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানায় সংস্থাটি।

এই বিভাগের আরও খবর