,

পুলিশের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচারকের মামলা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: শর্তে রাজি না হওয়ায় শিশুকে স্বর্ণ চোরাচালানের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল ও শপথ পাঠ করে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ায় ২ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি করেন শিশু আদালত এবং চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী নূর এ খোদা।

অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন পতেঙ্গা থানার দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন ও সুবীর পাল।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল দুটি স্বর্ণের বারসহ শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে বাটারফ্লাই পার্ক এলাকা থেকে এক শিশুকে আটক করে পুলিশ।

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশ থেকে বারগুলো নিয়ে আসার অভিযোগে ওই শিশুর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন উপ-পরিদর্শক আনোয়ার।

ওই মামলায় একই বছরের ৩ অক্টোবর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে দাবি করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক সুবীর পাল। চলতি বছরের ১১ এপ্রিল নিজেদের অভিযোগ ও প্রতিবেদনের পক্ষে আদালতে সাক্ষ্য দেন দুই এসআই। বিচার প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর শিশুটিকে নির্দোষ বলে রায় দেয় আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করে, অভিযুক্ত শিশুর নিকটাত্মীয় এ এইচ এম সুমন শুল্ক না দিয়ে বাহরাইন থেকে দুটি সোনার বার নিয়ে আসায় ব্যাগেজ পরিদর্শক তা আটক করেন। পরে সুমন বিধি অনুসারে শুল্ক পরিশোধ করে বার দুটি নিয়ে অভিযুক্ত শিশুটিকে দেন। ওই শিশু বার দুটি নিয়ে যাওয়ার সময় সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

পরে সোনার বার দুটির একটি দাবি করে শিশুটিকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও তার মা সোনার বারের বৈধ কাগজপত্র দেখিয়ে প্রস্তাবে রাজি হননি। এতে পুলিশ মিথ্যা মামলা দায়ের করে এবং মামলার সমর্থনে শপথ গ্রহণ করে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, শিশুটির মা সোনার বারের শুল্কায়নের কাগজপত্র উপস্থাপন করা সত্ত্বেও তা আমলে নেয়া হয়নি এবং ওই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব অফিস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেননি তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি বাদী পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচানোর উদ্দেশে দায়িত্ব জ্ঞানহীন এবং মিথ্যা অভিযোগপত্র দিয়েছেন আদালতে। শুধু তাই নয়, প্রকৃত সত্য জেনেও শপথ গ্রহণ করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি।

এই মামলায় অভিযুক্ত শিশুটি নির্দোষ হয়েও ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ২৮ মে পর্যন্ত এক মাস ৬ দিন জেল হাজতে আটক থাকার পর জামিনে মুক্তি পায়।

বেঞ্চ সহকারী নূর এ খোদা বলেন, ‘ওই শিশুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা, মিথ্যা পুলিশ প্রতিবেদন দেয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ায় আসামিরা পেনাল কোড ১৭৭, ১৮১, ১৯৩ এবং ২১১ ধারায় অপরাধ করেছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর