,

পাটের ব্যাগ ব্যবহার আইন কেন মানা হচ্ছে না: হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কেন মানা হচ্ছে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ধান, চালসহ ১৯ পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কি না তাও জানতে চেয়েছে আদালত।

এ বিষয়ে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্টের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এ আদেশের পাশাপাশি পণ্যের প্যাকিংয়ে পাটের ব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।

বাণিজ্য সচিব, আইন সচিব, কৃষি সচিব, পাট ও বস্ত্র সচিব, খাদ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১৪ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম জি সারোয়ার পায়েল ও ইশিতা পারভীন।

আদেশের পরে রিট করা আইনজীবী সুমাইয়া আজিজ বলেন, ‘পাটের ব্যাগ বাধ্যতামূলক ব্যবহার সংক্রান্ত ২০১০ সালের একটি আইন আছে। যেখানে সব পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পরে ১৯টি পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

‘তাই ওই আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পণ্যগুলো আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বহন, সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করতে গত ২৬ মে বাংলাদেশ জুট মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে থেকে রিটটি করা হয়।’

এ আইনজীবী বলেন, ‘পাটের ব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত ২০১০ সালের একটি আইন করা হয়েছিল। যেখানে সমস্ত পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১৯টি পণ্যের প্যাকেজিংয়ে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করার কথা বলা হয়।

‘এসব পণ্য আমদানি, রপ্তানি, বিক্রি সব ক্ষেত্রে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। এই আইন অমান্য করে আসছে বিভিন্ন কোম্পানি। এ কারণে গত ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ জুট মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে থেকে অবহিতকরণ চিঠি পাঠনো হয়। এর পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ২৩ মে প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নের জন্যে নির্দেশনা চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। তারপরও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিটটি করা হয়।’

এর আগে ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট মুরগি ও মাছের খাবার সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার। ‘পোল্ট্রি’ ও ‘ফিস ফিড’সহ মোট ১৯টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। ওই দিন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য দেয়া হয়।

পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০-এর ধারা ২২ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা, ২০১৩-এর অধিকতর সংশোধন করে ‘পোল্ট্রি’ ও ‘ফিস ফিড’ সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। আইন অনুযায়ী ছয়টি পণ্য— ধান, চাল, গম, ভূট্টা, সার ও চিনি পাটজাত মোড়কে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুড়াসহ মোট ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।

আইন অনুযায়ী পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়। আর এ অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর ১০০ কোটিরও বেশি পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হবে। স্থানীয় বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, পাট চাষিদের পাটের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে এবং সর্বোপরি পাটের উৎপাদন বেড়ে যাওয়াসহ পাট শিল্প ও পরিবেশ রক্ষা পাবে।

এই বিভাগের আরও খবর