পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে এক নারীকে নিয়ে পালিয়েছেন পঞ্চগড়ের দারুল উলুম মদিনাতুল ইসলাম কওমি মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এজাজ আহম্মেদ।
এজাজ আহম্মেদ তার প্রথম স্ত্রীকেও একইভাবে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। এ ঘটনায় ওই মাদরাসার শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এজাজের প্রথম স্ত্রী।
এ ঘটনায় এজাজের প্রথম স্ত্রী পঞ্চগড় সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। কয়েক দিন আগে এজাজ আহম্মেদ পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে উধাও হন। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তা জানেন না পরিবারের কেউ।
এজাজ আহম্মেদের প্রথম স্ত্রী আকলিমা বেগম আখি বলেন, আমার বাবার বাড়ি বগুড়া সদরের চকসূত্রাপুর এলাকায়। বিয়ের পর স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই ছিলাম। ঢাকার বিক্রমপুুরে স্বামীর বাড়িতে থাকতাম। মোবাইলে রং নম্বরে এজাজ আহম্মেদের সঙ্গে পরিচয় হয়। এক সময় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আমার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে এজাজ।
পরে সাত বছরের একটি মেয়ে সন্তানসহ আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। বিয়ের পর থেকে পঞ্চগড়ে বসবাস শুরু করি আমরা। ভালোই চলছিল আমাদের সংসার। এর মধ্যে আমাদের সংসারে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু গত তিন বছর আগ থেকে এজাজের আচরণ পরিবর্তন হতে থাকে। সে কারণে-অকারণে আমাকে মারধর করত। বাড়িতে খরচের টাকা দিত না। এমনকি সময়মতো বাড়ি ফিরত না। এরপরই আমি জানতে পারি এজাজ আবার পরকীয়ায় জড়িয়ে গেছে।
এ নিয়ে ঝগড়া হলে ওই নারীকে বাদ দিয়ে এর কিছুদিন পর মাদরাসার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও পঞ্চগড় শহরের কামাতপাড়া এলাকার দুলাল ইসলামের স্ত্রী শরীফা আক্তার মুন্নীর (৩৮) সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ায় এজাজ।
তখন প্রতিবাদ করলে আমার ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। এরপর আগের নিয়মেই পরকীয়া প্রেমিকা শরীফাকে দিয়ে তার সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে। কয়েকদিন আগে পরকীয়া প্রেমিকা শরীফাকে নিয়ে উধাও হয়ে যায় এজাজ। এজাজ পালিয়ে যাওয়ায় দুটি পরিবারের লোকজন সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। একের পর এক পরকীয়া করাই যেন তার কাজে পরিণত হয়েছে।
আকলিমা বেগম আরও বলেন, আমাকে প্রলোভন দেখিয়ে আমার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে এজাজ। তার চরিত্র এমন আমি জানতাম না। তার মোবাইল সিমের হিসাব নেই। আমি দুই সন্তান নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছি। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে চেয়ে চেয়ে কোনোমতে খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। মেয়েটার স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, মাওলানা এজাজ আহম্মেদের বিরুদ্ধে এর আগেও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল। তিনি সম্প্রতি কোটিপতি বনে গেছেন। তবে এই টাকার উৎস কোথায় তা কেউ জানেন না।
পঞ্চগড় শহরের কামাতপাড়া এলাকার দুলাল ইসলাম বলেন, আমার সুখের সংসার ভেঙে দিয়েছে এজাজ। আমার স্ত্রীকে ফুসলিয়ে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে। এজাজের শুধু চরিত্রগত দোষ নয় আরও খারাপ দিক আছে। আমি চাই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
দারুল উলুম মদিনাতুল ইসলাম কওমি মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা সাইফুর রহমান শাহীন বলেন, একজন মাদরাসা শিক্ষকের এমন আচরণ আমাদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। মাদরাসার পক্ষ থেকে তাকে এ বিষয়ে শোকজ করা হলেও কোনো জবাব দেয়নি।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি হযরত আলী বলেন, এজাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পর শোকজ করা হয়েছে। মাদরাসার সব হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য তাকে বলেছি। কিন্তু এক মাসের ছুটিতে গিয়ে এখন সে নিখোঁজ।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা চেম্বারের সভাপতি আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর ওই শিক্ষককে শোকজ করেছিলাম। তিনি শোকজের জবাব দেননি। মাদরাসার হিসাবও বুঝিয়ে দেননি। তাই আমরা তাকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি।