,

নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার: কমলনগরে মেঘনা গিলছে ফলকনের মাটি

রামগতি (লক্ষ্মীপুর): লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বর্ষা এলেই ভাঙন আতঙ্ক দেখা দেয়। এবার ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে চর ফলকন ইউনিয়নের লুধূয়া এলাকা। গত দুই মাসের ভাঙনে এ ইউনিয়নের অন্তত দুইশ’ পরিবার নিঃস্ব হয়েছে।

অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে ফসলি জমি, বাজার, মসজিদসহ শত শত ঘরবাড়ি। ভাঙনের মুখে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লিনিকসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা। সরেজমিন ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওই এলাকার ঐতিহ্যবাহী আবুল হোসেন তালুকদার বাড়ি মেঘনা গিলে খাচ্ছে। ভয়াবহ ভাঙনে বাড়ির বেশিরভাগ অংশ এখন নদীগর্ভে। ওই বাড়ির আশপাশেও ব্যাপকভাবে ভাঙছে। আতঙ্ক পুরো এলাকাজুড়ে। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও তা যথেষ্ট নয়।

তালুকদার বাড়ির উঠানে এখন মেঘনা নদী। প্রায় ১০ একর বাড়ির বেশিরভাগ অংশ এখন রাক্ষুসে মেঘনার পেটে। গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে বাড়ির নারকেল-সুপারি বাগান তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে দুটি বসতঘর।

এখন চারটি পাকা বসতঘর ভেঙে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। তালুকদার বাড়ির বাসিন্দারা বাপ-দাদার বসতভিটে হারিয়ে এখন শোকে পাথর। বাড়ির শেষচিহ্ন দেখতে আত্মীয়স্বজনরা আসছেন। তবে কারও সান্ত্বনা দেয়ার যেন ভাষা নেই। সবাই নির্বাক। সম্প্রতি ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে একই গ্রামের ১৩০ বছরের ঐতিহ্যবাহী চেয়ারম্যান বাড়ি।

নদীতে ওই বাড়ির আট পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। পাশেই তালুকদার বাড়ি। এখন ওই বাড়ি বিলীন হওয়ার পথে। চেয়ারম্যান বাড়ির উত্তর পাশেই মীর বাড়ি ভাঙতে শুরু করেছে। ভাঙনের মুখে সাদেক মাস্টার বাড়িও। তালুকদার বাড়ির বাসিন্দা হাজিরহাট উপকূল কলেজের সহকারী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন তালুকদার বলেন, প্রায় শত বছরের পুরনো বাড়িটি নদীতে ভাঙছে। ভাঙনে কেবল বাড়িঘরই নয়, ছিন্ন হচ্ছে পরিবারিক ও সামাজিক বন্ধন। গত এক দশকের ভাঙনে তাদের পরিবারের ১২০ একর ফসলি জমি নদীর পেটে চলে গেছে।

লুধূয়া বাজারের ২৫টি দোকানঘর বিলীন হয়েছে। ফসলি জমি, বাজারের দোকান নদীগর্ভে গেলেও দুঃখ অনুভব করিনি। কিন্তু বসতভিটা হারানোর শোক সইতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ওই বাড়ির অনেক স্মৃতি প্রতি মুহূর্তে তাড়া করবে, যন্ত্রণা দেবে। ঠিকাদারের অবহেলার কারণে তাদের বাড়ির বিশাল অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। চর ফলকন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী হারুনুর রশীদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে। আষাঢ়-শ্রাবণ গত দুই মাসে চর ফলকন গ্রামের অন্তত দুইশ’ পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে। তালুকদার বাড়ি ভাঙছে, মীর বাড়ি ভাঙতে শুরু করেছে।

সাদেক মাস্টার বাড়ি ভাঙনের মুখে। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়টিও বিলীন হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত বালুভর্তি জিওব্যাগ স্থাপন জরুরি।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। ভাঙনের গতি অনেক বেশি; তবুও ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা অব্যাহত আছে। লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন ঠেকাতে লুধূয়া এলাকায় জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। যে স্থানে ভাঙন সে স্থানেই ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। বর্ষা শেষে নভেম্বর মাসে রামগতি ও কমলনগরের ৩২ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা হবে। কাজ বাস্তবায়ন করবে সেনাবাহিনী।

এই বিভাগের আরও খবর