জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার: জীবিত নারীকে মৃত দেখিয়ে জাল দলিল করে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে তার নামে আদালতে মামলাও হয়েছে। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। ওই সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কিভাবে এই বিএনপি নেতা জমি দখলের জন্য জীবিত নারীকে মৃত দেখিয়েছেন।
মামলার বাদী টেকনাফের জালিতয়াপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইসমাঈল এজাহারে বলেন, ‘আমার মা সোনা মেহের জীবিত থাকা অবস্থায় তাকে মৃত দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের স্বাক্ষর জাল করে একটি ওয়ারিশ সনদ তৈরি করেন বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ। ওই সনদে আমার মাকে মৃত দেখিয়ে কথিত ওয়ারিশ হিসাবে আবদু শুক্কুর, ধলা বানু ও মলকা বানুর নাম বসিয়ে দেন।
তিনি বলেন, আমার মায়ের কথিত সন্তান আব্দুর শুক্কুরের মা মারা গেছেন উল্লেখ করে একই তারিখে আরও একটি জাল ওয়ারিশ সনদ তৈরি করেন। এসব জাল ওয়ারিশ সনদ নিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলের ৯ তারিখ আসামি আব্দুল্লাহ টেকনাফের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে একটি খতিয়ান সৃজনের আবেদন করেন। একই বছরের ১৩ এপ্রিল আমাদের নামীয় দিয়ারা ১৬৪৫ নং খতিয়ান জাল করে ভুয়া ২৩০০ নাম্বার দলিলের অনুবলে ৫৮ শতক জমি নিজের নামে দলিত তৈরি করেন।
সিআইডির তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত : মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি কক্সবাজারের উপ-পুলিশ পরিদর্শক ইমতিয়াজ ইসলাম তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ জমিটি দখলে নিতে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দুই দফা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করেন। ওই সনদ নিয়ে তিনি তৈরি করেন নকল খতিয়ান ও দলিল।’ ইতোমধ্যে প্রতিবেদনটি আদালতে পাঠিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
জালিয়াতি ঢাকতে বাদীর বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা : জাল জালিয়াতি ধরা পড়ায় সম্প্রতি বাদীদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা করেছেন আব্দুল্লাহ। ওই মামলা যে মিথ্যা তাও পুলিশের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এদিকে টেকনাফে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছিল আব্দুল্লাহর কারণে। নিজের স্বজনদের পদ ভাগাভাগি করে নিতে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ উপজেলা বিএনপির ব্যানারে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফেরার পথে কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে হামলা হয় নিজ দলের লোকজনের ওপর। উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন দাবি করেছেন, আব্দুল্লাহর স্বজনপ্রীতির কারণে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে সীমান্ত উপজেলায়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর কয়েকবার তার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।