,

নজরদারিতে এবার দুর্নীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ফটো)

বিশেষ প্রতিবেদকএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেয়া ৮০ পৃষ্ঠার ইশতেহারে যে ২১টি অঙ্গীকার ছিলো, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণটি হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণুতা) নীতি গ্রহণ করা।

দলটি যে তাদের ইশতেহারের অঙ্গীকারগুলো ভোলেননি তার প্রমাণ পাওয়া গেলো অভিযোগের তর্জনী ওঠার পর পরই ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে তাদের পদ থেকে হটানো। আর এ সিদ্ধান্তের পর সব মহলে ঘটনাটি বার্তা হিসেবেই গেলো যে-আ.লীগ তথা সরকার দুর্নীতির বিষয়ে কোন ধরণের আপোষ করবে না।

বিপুল জয়ে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের দাপট সর্বত্রই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কেউ যেন বেপরোয়া হয়ে না ওঠে তারই একটি বার্তা দলটির সব অঙ্গসংগঠনকে দিলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বালিশ আর পর্দা কাণ্ডেও সরকারের জোরালো পদক্ষেপ দেখতে চায় সাধারণ মানুষ।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। দুর্নীতিবাজ সে যে-ই হোক না কেন, তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।  আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকে ইঙ্গিত করে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

বৈঠকে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন নিয়ে কথা ওঠে। এ সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নেত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যুবলীগ। নেত্রীর জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করেছে এ অঙ্গ সংগঠনটি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাঁদাবাজির টাকা বৈধ করতে মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে।’

এমন মিলাদ মাহফিল তিনি চান না বলে  মন্তব‌্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর যুবলীগ নিয়ে তার কাছে আসা নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী উস্মা প্রকাশ করে জানান, যুবলীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি আর অস্ত্র উচিয়ে চলাফেরার অভিযোগ এসেছে তার কাছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অপসারণ করা হয়েছে দুর্নীতি আর চাঁদাবাজির অভিযোগের কারণে। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের এক ধরনের বার্তা দিয়েছেন নেত্রী (শেখ হাসিনা)। দলের মধ্যে তো বটেই সমাজ থেকে দুর্নীতি রোধে বিভিন্ন স্তরে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ আসতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ইশতেহার অনুযায়ী দল ও সরকারের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের দুর্নীতিবাজদের তিরস্কার ও সতর্ক করেন শেখ হাসিনা। পাশপাশি সৎ ও ভালো নেতাদের প্রশংসাও করেন তিনি।

‘টানা তিন বার সরকারে আছি। অনেকের অনেক কিছুই হয়েছে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমার সেই দুর্দিনের কর্মীদের অবস্থা একই আছে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, ক্যাডার পোষেন, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে, যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরও দমন করা হবে’-বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছে। এর মধ্যে বালিশ দুর্নীতি, সাড়ে ৩৭ লাখ টাকায় কেনা একটি পর্দার কাহিনী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫ হাজার ৫০০ টাকার বই ৮৫ হাজার টাকায় কেনার দুর্নীতি। এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সরকারের কঠোর অবস্থানে থাকা জরুরী। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখনই সমাজের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের স্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তারা মনে করেন, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা সরকারের উন্নয়ন আর সফলতাকে ম্লান করছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দুর্নীতি আর অপরাধ করলে কেউ-ই পার পাবে না। শেখ হাসিনার অঙ্গীকার দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি এরই মধ্যে দলের নেতাদের সেই বার্তা দিয়ে রেখেছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই কঠোর অবস্থানে থাকেন। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে তিনি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের এক ধরনের বার্তা দিয়ে রাখলেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে সরকার। আগামীতে সমাজ থেকে দুর্নীতি মুছে দিতে আরো কঠোর হবে শেখ হাসিনার সরকার।

‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নজরদারি আপতত দুর্নীতিবাজ আর তাদের মদদদারদের ‍উপরই তীক্ষ্ণ থাকবে। অতএব কেবল সাবধানই নয়, ভালো পথে এসে সততার সাথে নিজের ওপর অর্পিত কাজটাই করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা, শেখ হাসিনার কাছে বিকল্পের কিন্তু অভাব নেই’-এমনটাই বলছেন দলের বর্ষীয়ান নেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর