জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: পুরাতন হিসাব শেষ করে নতুন বছরে নতুন করে দেনাদারদের লেনদেনে উৎসাহী করতে আবহমান বাংলার ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্য হালখাতা। সারা বছর বেচাকেনার পর বছর শেষে বাকি টাকা তুলতে হালখাতার আয়োজন করে থাকে ছোট-বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি এই হালখাতায় এখন যুক্ত হয়েছে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নদ-নদীর ঘাটও। প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের হালখাতার আমন্ত্রণপত্র দিয়ে অনুষ্ঠানের দিন তারিখ জানিয়ে দেয়া হয়।
এসব ঐতিহ্য ছাড়িয়ে হালখাতায় এবার যুক্ত হয়েছে ব্যক্তিগত ধার বা হাওলাত দেয়া টাকা উত্তলোন প্রক্রিয়া। হালখাতার মাধ্যমে ধারের টাকা তোলার এই নতুন ধারণা সামনে এনে আলোচনায় এসেছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় এমএএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আউয়াল।
ইতোমধ্যে দেনাদারদের কাছে হালখাতার চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। আগামী ১২ জানুয়ারি তার হাওলাতি হালখাতা অনুষ্ঠিত হবে। ওই হালখাতার একটি চিঠি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
চিঠিতে দেনাদারদের নুতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ওই শিক্ষক। লিখেছেন, ‘আপনাকে টাকা হাওলাত দিতে পারায় আমি আনন্দিত। সেমতে উক্ত হাওলাতি টাকা উত্তোলনের লক্ষে আগামী ১২ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার শুভ হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
‘উক্ত হালখাতা অনুষ্ঠানে আপনি উপস্থিত হয়ে ঋণ পরিশোধ করে ঋণমুক্ত থাকুন।’
জানা গেছে, এই ঋণ পরিশোধের হালখাতায় ৩৫ জন দেনাদারকে চিঠি দিয়েছেন ওই শিক্ষক। এসব মানুষের মাঝে বেশিরভাগই তার বন্ধুবান্ধব, আত্বীয়-স্বজনসহ কাছের মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিঠি পাওয়া কয়েকজন বলেন, ‘আমরা হালখাতার চিঠি পেয়ে প্রথমে হতভম্ব হলেও পরে বুঝতে পেরেছি, ধারের টাকা ফেরত দিতে দেরি হয়েছে। আশা করছি, হালখাতায় তার টাকা পরিশোধ করে দেব।’
হালখাতার আয়োজক শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘তিন বছর ধরে বন্ধুবান্ধব ও নিকটজনরা বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে টাকা হাওলাত নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন একসঙ্গে উঠাবসা রয়েছে আমার। তাই লজ্জায় তাদের কাছে টাকা ফেরতও চাইতে পারি না, তারাও দেয়ার নাম করে না। পরে টাকা ফেরত পেতে হালখাতা করার বিষয়টি মাথায় আসে। এতে তাদের সঙ্গে মনোমালিন্যও হলো না, আবার টাকা ওঠার সম্ভাবনাও শতভাগ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৩৫ জনকে চিঠি দিয়েছি। এদের মধ্যে কেউ তিন বছর আগে টাকা নিয়েছে। সব মিলিয়ে ৩ লাখ টাকার মতো ধার দেয়া রয়েছে আমার। চিঠি পেয়ে অনেকে টাকা পরিশোধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন বলে শুনেছি।’