,

দেশে এক সপ্তাহে শনাক্ত বেড়েছে ১৮০ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাস মহামারির এক ‘গুরুতর সন্ধিক্ষণে’ আছে বলে সতর্ক করে দিয়ে এর তীব্রতা রুখতে সব দেশকে এক জোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।

গতকাল সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসকে শেষ করতে যা যা প্রয়োজন তার সবই এখন আমাদের হাতে আছে। আমরা (বছরের পর বছর) এভাবে মহামারি টেনে নিয়ে চলতে পারি না। এভাবে আতঙ্কে আর অবহেলায় দিন চলতে পার না। এদিকে কেউ জানে ডেলটা-ওমিক্রনের পর করোনার নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসছে কি না।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, ওমিক্রন কখন যাবে তা বলার সময় এখনো আসেনি। নিরাপদ থাকার উপায় টিকা গ্রহণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যারা টিকা গ্রহণ করেনি তাদের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। সব ধনী দেশগুলোর  সম্মিলিতভাবে করোনাসহ সব সংক্রমক রোগের জন্য একটি টিকা আবিষ্কার করার তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক মনোভাব পরিহার করে সব ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

করোনা ভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রনের দাপটে দেশে রোগী প্রতিদিনই বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত সপ্তাহে (১৭ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি) করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬৭ হাজার ৪২৫ জন। এর আগের সপ্তাহে (১০ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি) শনাক্ত হয়েছিলন ২৪ হাজার ১১ জন। অর্থাত্ আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ১৮০ দশমিক ৮ শতাংশ। গত সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৯ জনের। আগের সপ্তাহে মারা গিয়েছিলেন ৪২ জন। অর্থাৎ এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। এই ৭৯ জনের মধ্যে ৫২ জনেরই কোনো না কোনো ধরনের দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি বা কোমরবিডিটি ছিল। তাদের ৭৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে এবং ৫১ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। এদিকে দেশে করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে রোগী ও সংক্রমণের হার প্রায় প্রতিদিনই আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে এবার ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণের হার পাওয়া গেল দুই বছরের রেকর্ডের কাছাকাছি। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ হাজার ৮২৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। তাতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা গত ছয় মাসের সর্বোচ্চ। শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি ছিল সর্বশেষ গত বছরের ২৪ জুলাই, সেদিন প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩২ দশমিক ৫৫টিতে কোভিড পজিটিভ আসে। আর ২০২০ সালের ১২ জুলাই শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, যা এ মাহামারিকালের রেকর্ড। মহামারির মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর আগে এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৩ আগস্ট, সেদিন ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার আগে ২৮ জুলাই রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয় এক দিনে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, করোনা কবে যাবে তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে কেউ কেউ বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলছেন। এই ভ্যারিয়েন্ট বদলে আবার বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টে রূপ নিতে পারে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে গা-ছাড়া ভাব দেখানো উচিত নয়। এখন নিরাপদ থাকতে হলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। একই সঙ্গে টিকা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কাজ করতে পারব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ওমিক্রন কবে শেষ হবে এটা বলার সময় এখনো আসেনি। এখন আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত কীভাবে এটা মোকাবিলা করতে হবে। অনেকে ভাবছেন ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও তেমন কিছু হয় না। এটা ভুল ধারণা। সঠিকভাবে চিকিৎসা না করার কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে বয়স্করাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের ঝুঁকি বেশি। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

শ্যামলীর ২৫০ বেডের টিভি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, করোনায় ডাক্তার-নার্সরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ডায়াবেটিস, কিডনি, ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তরা এবং যারা টিকা নেননি তারা করোনার ঝুঁকিতে আছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং টিকা নেওয়া—এই দুটি কাজ করলে করোনা থেকে নিরাপদ থাকা যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ২৩৮ জনের প্রাণ গেছে করোনা ভাইরাসে। সরকারি হিসেবে গত এক দিনে দেশে করোনা থেকে সেরে উঠেছেন ৯৯৮ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫৯ জন সুস্হ হয়ে উঠলেন। এই হিসেবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬৭ জন।

এই বিভাগের আরও খবর