,

দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা: মামলা হয়নি থানায়

জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা: কুমিল্লার মুরাদনগরে ডাকাত দলের সদস্য সন্দেহে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার দুই দিনেও থানায় কোনো মামলা হয়নি।

এ ঘটনায় শনিবার (১৪ জানুয়ারি) রাত ১১টা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে যে গ্রামে নিহত ওই দুই যুবকসহ তিনজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছিল-উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের সেই পালাসুতা গ্রামের ঘরে ঘরেই এখন গ্রেপ্তার আতঙ্ক।

গ্রেপ্তার হওয়ার আশংকায় গ্রামের বেশির ভাগ পুরুষই এখন ঘরছাড়া বলে জানা গেছে।

এদিকে, ঘটনার দুই দিন পার হলেও এখনো নিহতদের বিরুদ্ধে পুরোনো কোনো চুরি-ডাকাতির মামলার সন্ধান পায়নি পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে- তারা বিষয়টি আরেকটু সময় নিয়ে যাচাই করে দেখতে চায়। ওই যুবকদের পিটিয়ে হত্যার পর এলাকাবাসী দাবি করে- নিহতদের বিরুদ্ধে একাধিক চুরি-ডাকাতির মামলা রয়েছে। তবে ঘটনার সময় হতাহতরা ডাকাতি বা ডাকাতির চেষ্টা করেছেন- এমন কোনো প্রমাণ শনিবার রাত পর্যন্ত পায়নি পুলিশ।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ঘটনার পর থেকে এলাকার মানুষ তাদের বিরুদ্ধে চুরি-ডাকাতির মামলা থাকার কথা বললেও আমরা এখনো সেটি নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখছি। তবে ঘটনার দিন তারা চুরি-ডাকাতির চেষ্টা করেছে- এমন কোনো প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি। শনিবার কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় এখনো মামলা হয়নি। নিহতদের পরিবার যদি মামলা না করে তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করবে।

কামরুজ্জামান তালুকদার আরো বলেন, আতঙ্কে পুরুষরা কেন গ্রাম ছাড়ছে- এ বিষয়ে আমি জানি না। কারণ পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে অভিযান পরিচালনা করেনি। আমরা বিষয়টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামের নায়েব আলী ওরফে নাবু মিয়ার ঘর থেকে ধরে নিয়ে তিনজন যুবককে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। এতে দুজনের মৃত্যু হয় এবং আরেকজন আশংকাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার সময় স্থানীয় গ্রামের মসজিদ ও ওয়াজ মাহফিলের মাইকে গ্রামে ডাকাত এসেছে বলে ঘোষণা দেওয়া হলে লোকজন একত্রিত হয়ে তাঁদেরকে গণপিটুনি দেওয়া শুরু করে।

নিহতরা হলেন- উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে নুরু মিয়া (২৮) ও একই ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৭)। এ ঘটনায় গুরুতর আহত শাহজাহান মিয়া কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বাগমারা গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে। যে ঘর থেকে তিনজনকে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দেওয়া হয় সেই ঘরটি ছিল নিহত নুরুর শ্বশুর নাবু মিয়ার।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন ধরে মুরাদনগর উপজেলার পালাসুতা ও কাজিয়াতল গ্রামে চুরি-ডাকাতি বেড়ে গেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ছিলেন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে পালাসুতা গ্রামের মসজিদের পাশে মাহফিল হচ্ছিল। হঠাৎ খবর আসে গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে। তখন মসজিদের ও মাহফিলের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে।

লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কে অবস্থান করে। এ সময় নুরু মিয়ার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ওই তিনজনকে দেখে ডাকাত দলের সদস্য বলে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীর। পরে ‘ডাকাত, ডাকাত’ বলে তাদেরকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই তিন যুবককে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। রাত ২টার দিকে ওই দুজনকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসক।

এই বিভাগের আরও খবর