বিডিনিউজ ১০ রিপোর্ট: সারাদেশে পালিত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই পবিত্র দিনে পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি খুঁজছেন মুসলমানরা। এছাড়া ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
বাঙালি সমাজে কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত মুসলমানদের এই অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করে আসছে।
সোমবার সকালে জায়নামাজ হাতে সবাই ছুটছেন ঈদগাহে। শিশুরা রঙিন পোশাকে ছুটোছুটি করছে। চার দিকে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলিম ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। কোরবানির মর্ম অনুধাবন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করতে আমাদের সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ-নিজ অবস্থান থেকে কাজের মাধ্যমে বৈষম্যহীন, সুখী ও সমৃদ্ধ, বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা। তাই আসুন, আমরা সবাই পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ-নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন,সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বঙ্গভবনে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।বঙ্গভবনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখবেন।
মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলীয় নেতা ও কর্মী, বিচারক এবং বিদেশী কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
রাজধানীর সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আগামীকাল সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিতব্য প্রধান জামাতে নারীদের জন্যও ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
এবার ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি’র উদ্যোগে রাজধানীর ৫৮২টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতসহ ঈদুল আজহার ৩১২টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে’র ২৭০টি স্থানে জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রতিবারের মত এবারও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে।
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমে জাতীয় মসজিদ পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় পবিত্র ঈদুল আযহার দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯ টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে সকাল ৮ টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় এবং উত্তর নীলক্ষেত ও গিয়াসউদ্দিন আহমেদ আবাসিক এলাকার বায়তুস সালাম জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার ঈদ জামাত শুরু হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। জামাতে ইমামতি করবেন প্যানেল ইমাম শহরের মারকায মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফিজুর রহমান খান।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি এবং বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়াও ‘ঈদ মোবারক’ লিখিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শিত হচ্ছে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে নির্দিষ্ট সরকারি ভবনসমূহ ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে রোববার থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের সরকারি ছুটি। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহর থেকে অগণিত মানুষ নাড়ির টানে গেছেন গ্রামের বাড়িতে।
সারাদেশে বিভাগ বা জেলা বা উপজেলা বা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা বা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ বা সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি অনুযায়ী ঈদ উদযাপন করছে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করছে।
এদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
ঈদ উপলক্ষে দেশের সব সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কোরবানিকৃত পশুর বর্জ্য দ্বারা যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় সে বিষয়ে সব প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুৎবায় এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করা হয়েছে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)’কে কুরবানী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানী হয়ে যায়।
হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে।