,

ঝুপড়ি ঘরে সাজুর মানবেতর জীবন

জেলা প্রতিনিধি, ভোলা: সাজু বেগম। বেশ কয়েক বছর আগে ক্যানসারে ভুগে স্বামী মারা গেছে। তিন সন্তান নিয়ে অভাবে সংসার। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাবের সঙ্গে যেন পাকাপাকিভাবে সংসার পাতিয়ে নিলেন। সন্তানদের নিয়ে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। জীবিকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে বেছে নিয়েছিলেন গৃহপরিচারিকার কাজ। কিন্তু তাতেও স্বস্তি মেলেনি, ঘুচেনি অভাব।
সরেজমিন দেখা যায়, বর্তমানে দৌলতখান উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের কলাকোপা গ্রামে এক জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন সাজু বেগম। ১৪ বছর আগে এ গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে সালাউদ্দিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর থেকে তাদের দাম্পত্য জীবন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হলেও সুখের কমতি ছিল না। কিন্তু ছোট সন্তান সজীবের জন্মের পর তার স্বামী সালাউদ্দিনের মরণব্যাধি ক্যানসার শনাক্ত হয়। অর্থের অভাবে স্বামী সালাউদ্দিনকে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারায় অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। এরপর থেকেই সাজু বেগমের জীবনে নেমে আসে অভাবের কালো ছায়া। অন্যের বাড়িতে কাজ না পেলে সন্তানদের ভিক্ষাবৃত্তি করে খাওয়াতে হয়। তবু সন্তানদের লেখাপড়া থামাননি। অভাব এসে থামিয়ে দিতে চায় বারবার।
কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে সন্তানদের লেখাপড়া যেন গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে। ঝুপড়ি ঘরে যেদিন কুপির তেল জোটে না, সেদিন আঁধার ঘরে জ্বলে ওঠে না সন্তানদের পড়ার বাতি। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার ইচ্ছেটুকু চাপা দিয়ে রাখতে হয়। হতদরিদ্র সাজু বেগম বলেন, ‘তিন সন্তানকে লেখাপড়া করাতে হিমশিম খেতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় কুপির তেল ফুরিয়ে গেলে সন্তানদের নিয়ে রাতে অন্ধকারেই থাকতে হয় তাদের। অভাগীর দুয়ারে দুর্যোগের রেশ বাড়াতে আসে বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টির পানি আটকাতে অক্ষম জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরের দুর্বল ছাদ। দেয়াল ও ছাদ চুইয়ে পড়া পানি এনে দেয় নির্ঘুম রাত। রাত কাটে ভেসে যাওয়ার আতঙ্কে।’

সাজু বেগম অভিযোগ করে জানান, সরকারিভাবে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা জোটে না তার কপালে। তার নামে নেই বিধবা ভাতা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে কোনো কিছু চাইতে গেলে মিথ্যা আশ্বা স দিয়ে থাকেন। সাহায্যের আশায় পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। ফলে সাজু বেগম ও তার সন্তানরা বাধ্য হচ্ছেন মানবেতর জীবন যাপনে।
প্রতিবেশী রুবেল হোসেন জানান, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর সাজু বেগম ছোট তিনটি বাচ্চা নিয়ে অনাহারে-অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে। বিদ্যুৎহীন জরাজীর্ণ ঘরে থাকে, যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। তিনিসহ স্থানীয় করিম, মালেক ও মোরশেদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অসহায় সাজু বেগমের পরিবাবকে মুজিবর্বষের একটি ঘর দেওয়ার এবং একটি বিধবা ভাতার দাবি জানান। এতে করে সাজু বেগমের অসহায় পরিবারটি উপকৃত হবে।’
দৌলতখান সমাজসেবা কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা জানান, ‘আর্থিক সহায়তার আবেদন করলে ওই অসহায় পরিবারকে বরাদ্দ সাপেক্ষে সুবিধার আওতায় আনা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর