,

‘চোখের সামনে সব জমিজমা নদীতে গেল’

জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর: জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শত শত বিঘা ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে জমিজমা, সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশাহারা উপজেলার কৃষকরা। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারাও আশার বাণী শোনাতে পারেননি।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের ঝালর চর সিয়ালের টেক থেকে শুরু করে কান্দির গ্রাম, নয়াগ্রাম, ভাটিরপাড়ার দক্ষিণ মাথা পর্যন্ত বহ্মপুত্র নদের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শতাধিক বিঘা ফসলি জমি ও অর্ধশত বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক ইউসুফ আলী (৩৫) বলেন, চোখের সামনে সব জমিজমা নদীতে ভেসে গেল। কেউ কিছুই করল না, কেউ দেখতেও আসেনি। একটা ছোটখাটো বেড়িবাঁধ দিলেই নদীভাঙন ঠেকানো যেত। দুই বিঘা মাটি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে শসার চাষ করেছেন সবজি চাষি আব্দুল মান্নান। কিছু দিন গেলেই শসা বিক্রি করতে পারতেন। গাছ বেশ বড় হয়ে উঠেছে, ধারদেনা করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছেন তিনি। অর্ধেক ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

একই গ্রামের আবেদা (৩৫), ছদর আলী (৬৫), মৃত শাহা আলম হাজীসহ অনেকের একরের পর একর জমি এক সপ্তাহের ব্যবধানে বহ্মপুত্র গিলে ফেলেছে। নদীর পশ্চিমপাড়ে সিয়ালের টেকে শতাধিক বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। নিরুপায় হয়ে অনেকে পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে এসব পয়েন্টে নদীভাঙন অব্যাহত থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা প্রশাসনের কোনো ব্যক্তি আমাদের নদীভাঙন দেখতে আসেননি। আমরা কার কাছে, কোথায় গিয়ে অভিযোগ করব? নদীভাঙনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার সাথে উত্তর অঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার শেফা  বলেন, এ ধরনের নদীভাঙনের খবর পেলে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে রিপোর্ট পাঠাই। তারা সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আমাদের এসব ব্যাপারে তেমন কিছু করার থাকে না। এ ব্যাপারেও আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, নদীমাতৃক দেশে নদীভাঙন একটা স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা যে বরাদ্দ পাই তা দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করি। ফসলি জমির ভাঙন প্রতিরোধের জন্য আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই। তারপরও আমরা সরেজমিনে গিয়ে কী করা যায় তার উদ্যোগ গ্রহণ করব।

এই বিভাগের আরও খবর