,

চিড়া-মুড়ি নিয়ে জনসভা মাঠে নেতাকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়া শহরের স্টেশন রোড এলাকায় সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ৫০টিরও বেশি বাস। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় বাসগুলো ছেড়ে যাওয়ার কথা রংপুরে বিএনপি সমাবেশস্থলের উদ্দেশে। দুপুর থেকেই এসব বাসে সিট নেওয়ার জন্য কর্মীর উপচে পড়া ভিড়।

আগামীকাল শনিবার বিকেলে গণসমাবেশ হলেও ভোর থেকেই মাঠে থাকবেন তাঁরা। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি-সংবলিত গেঞ্জি পরিহিত কর্মীরা দল বেঁধে যাচ্ছেন সেখানে। গতকাল সন্ধ্যায় লালমনিরহাট থেকে ট্রেনে রংপুর স্টেশনে এসেছেন মিরাজুল ও সবুজের নেতৃত্বে ৬০-৭০ জন নেতাকর্মী।

স্টেশনে রাতযাপনের পর শুক্রবার সকালে যাবেন সমাবেশস্থলে। জানালেন, বাস বন্ধের আশঙ্কা থেকে দু’দিন আগেই রংপুরে এসেছেন তাঁরা। এভাবে তাঁদের এলাকা থেকে আরও অনেকে আসছেন। স্টেশনে তাঁরা চিড়া-মুড়ি খেয়েই রাত পার করবেন। বাড়ি থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছেন পানি, চিড়া ও কম্বল।

আবার গাইবান্ধার ফুলছড়ি থেকে বুধবার রাতেই এসেছেন আমিনুল ফরিদ। তিনি জানান, উঠেছেন এক আত্মীয়ের বাসায়। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও ১২ নেতাকর্মী। তাঁরা সবাই সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত রংপুরেই অবস্থান করবেন।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার আবু বক্কর ও সিরাজুল মিয়া জানালেন, তাঁরা এসেছেন বাস বন্ধ হতে পারে- এ আশঙ্কায়। রংপুরে পৌঁছার পর জানলেন, ঠিকই বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা শুক্রবার সভাস্থলের আশপাশেই থাকবেন। তাঁদের মতো আরও শত শত নেতাকর্মী বৃহস্পতিবারেই রংপুরে পৌঁছেছেন বলে জানান তিনি।

কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুরে আগামীকাল বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে হঠাৎ শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি।

পরিবহন বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে জেলা মালিক সমিতি মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন বন্ধের দাবিসহ নানা যুক্তি দিলেও বিএনপি বলছে, রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতেই এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তবে এসব করে জনসমাগম ঠেকানো যাবে না। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার সমাবেশেও এমনি করে বাধা দেওয়া হয়েছিল। যে জন্য তাঁরা আগে থেকেই এসব পরিকল্পনা বুঝে নিয়েছেন। যত বাধাই আসুক; মানুষ স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে।

পরিবহন বন্ধে নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ করেছেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু। তিনি বলেন, শত বাধা-বিপত্তি জনস্রোত আটকাতে পারবে না। মানুষ হেঁটে হলেও সমাবেশে যোগ দেবে।

বিএনপির এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল। তিনি বলেন, সমাবেশ সফল হবে না- বুঝতে পেরেই বিএনপি নেতারা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তাদের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা মিথ্যুক। তারা সব সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়ানোর চেষ্টা করে। পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে মোটর মালিক সমিতি। সেটা আলাদা একটি স্বাধীন সংগঠন। তাদের সিদ্ধান্তের বিষয় তারাই ভালো বলতে পারবে। আওয়ামী লীগ চায়, বিএনপি সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ করুক। কিন্তু সমাবেশের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে আমরা বসে থাকব না।

এদিকে, বিএনপি জিলা স্কুল মাঠ চেয়ে আবেদন করলেও সেখানে অনুমতি মেলেনি। পরে স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে সমাবেশের আয়োজন করেছে দলটি। জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, হত্যা, হামলা ও মামলার প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
সমাবেশ সফল করতে জেলা-উপজেলাগুলোতে প্রস্তুতি সভাসহ প্রচারপত্র বিতরণ, জনসংযোগ, পথসভা করছেন দলের নেতাকর্মী। এসব প্রস্তুতি সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পর্যায়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।

রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চলছে। এ ছাড়াও রংপুর-কুড়িগ্রাম রুটে প্রশাসনিক হয়রানি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসবের প্রতিবাদে আমরা এক যৌথ সভায় সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিএনপির সমাবেশের এক দিন আগে বাস বন্ধের বিষয়টি লোকসমাগমে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমাবেশ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমাদের এ কর্মসূচির প্রস্তুতি আগে থেকেই চলছিল। সংগঠনের নেতাদের সর্বসম্মতির পর ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন-নবী ডন বলেন, এর আগের সমাবেশগুলোতেও গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছিল। পথে পথে বিএনপি নেতাকর্মীর বাধা দিয়েছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এখন রংপুরেও তাই করার চেষ্টা করছে তারা। পরিবহন ধর্মঘট করে এই সমাবেশকে বানচাল করতে চায়। যাতে সমাবেশে আমাদের নেতাকর্মী আসতে না পারে, সে ব্যবস্থাই করেছে। কিন্তু যেভাবেই হোক সমাবেশ সফল হবে।

ঢাকা থেকে রংপুরে এসে পৌঁছেছেন রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের দলনেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ। গতকাল সমাবেশস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাঁরা নাকি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় খেলা দেখাবেন। আমরা তো খেলা দেখছি। শনিবার রংপুরে আমরাও খেলা দেখব। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ গণসমাবেশ হবে এদিন। যার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হবে- সারাদেশের মানুষ বিএনপির সঙ্গে আছে।

তিনি বলেন, একটি পরিচ্ছন্ন এবং রেকর্ডভাঙা উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এর আগে রংপুরের কোনো সমাবেশে এত লোক হয়নি- সেটাই টার্গেট আমাদের। আমরা নিশ্চিত করেছি- শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়; তৃণমূল, নগর, শহর এবং বন্দরের সাধারণ মানুষও এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের মিনারের সামনেই কাঠ ও বাঁশ দিয়ে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থ মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। মাঠের পাশে কয়েকটি গেটও করা হচ্ছে।

রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা জানান, বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে বিএনপি নেতাকর্মী নির্বিঘ্নে আসছে। কাউকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর