,

চার দেয়ালে বন্দি আল-আমিনের জীবন

বরিশাল ব্যুরো: আলিম শেষ বর্ষে পড়া অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচআনি গ্রামের বাসিন্দা আল-আমিন। পরিবারের সদস্য ও সহপাঠীদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ ও মারধর করেন আল-আমিন।

আল-আমিন বাড়িতে নিজের মা থেকে শুরু করে কাছের সবাইকে মারধর করত। পরে ঘরের সামনে একটি কক্ষ বানিয়ে আটকে রাখা হয় তাকে। সেই থেকে প্রায় এক যুগ ধরে চার দেয়ালে বন্দি ৩০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি।

তার বৃদ্ধ বাবা আবুল কালাম হাওলাদার জানান, ঢাকায় ব্যবসা করতেন তিনি। মেধাবী সন্তান আল-আমিনের এমন অবস্থা দেখে ছয় বছর আগে আল-আমিনের মা মারা যান। বড় ও মেজ ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাকচালক। ছোট ছেলে ঢাকায় স্বল্প আয়ের ব্যবসা করেন। অর্থনৈতিকভাবে ততটা ভালো না হওয়ায় ওষুধ তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবারও দিতে পারছেন না আল-আমিনকে।

আবুল কালাম হাওলাদার বলেন, ‘অন্য সন্তানদের আয় তেমন না থাকায় খোঁজ নিতে পারছেন না কেউ। এতে অনাহারেই দিন কাটাতে হচ্ছে আমাদের। মাদ্রাসায় লেখাপড়ার প্রতি ঝোঁক ছিল আল-আমিনের। সে নিয়মিত পড়াশুনা করে ভালো একটা অবস্থানে ছিল। তার অস্বাভাবিক আচরণ ধরা পড়ার পর বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

‘পরবর্তীতে চিকিৎসকদের পরামর্শে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর আল-আমিন ভালো হয়ে গেছে জানিয়ে চিকিৎসক বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু বাড়িতে আসার পর আবারও সেই একই অবস্থা দেখা দেয়। পাবনা মানসিক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয় এর চেয়ে আর ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

তিনি আরও জানান, পরে তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আল-আমিনকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে তার রেগে ওঠা এবং মানুষের ওপর হামলা চালানোর কারণে তাকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

চার দেয়ালে বন্দি অবস্থায় থাকা আল-আমিন বলেন, ‘এভাবে বন্দি থাকতে ভালো লাগছে না। পরিবারের সদস্যরা বন্দি করে রেখেছে। মুক্তি চাই।’

বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতেমা বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর