নিজস্ব প্রতিবেদক: তারা পেশায় পোশাক কারখানার শ্রমিক। প্রচুর টাকা কামানোর লোভে চাকরি দেওয়ার নামে অসহায় শ্রমিকদের জিম্মি করতেন। অপহরণ ও মুক্তি আদায়ের চক্র গড়ে তোলেন তারা। বিগত চার বছরে তারা অন্তত ৬০টি এমন অপরাধের নেপথ্যে জড়িত বলে থাকার প্রাথমিক তথ্যে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় চাকরি দেওয়ার নামে আরিফ হোসেন নামে এক তরুণকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাবের হাতে মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে আসে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
রবিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে র্যাব-৪ এর সাভারের আশুলিয়ার নবীনগরে ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে রাতে আসামিদের গাজীপুর ও আশুলিয়া বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- রাজশাহীর বাগমারা থানার শ্রীপতিয়াপাড়া গ্রামের সেন্টু সরদার (৩৫), দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানার নৌপাড়া গ্রামের জমির উদ্দিন (৩৩), সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানার রাব্বি আহম্মদ (২৭) ও টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার কামদেববাড়ী গ্রামের জহিরুল ইসলাম (৩৫)। তারা চারজনই বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক, গাজীপুর ও আশুলিয়া বসবাস করে আসছেন।
হত্যাকাণ্ডের শিকার আরিফ হোসেন (১৯) সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর থানার বাজরা গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় ছিলেন পোশাক রং কারখানার শ্রমিক। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে থাকতেন।
নিহতের বাবা ওয়াজেদ আলী বলেন, আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। যাতে আর কারো বুক এভাবে খালি না হয়।
র্যাব-৪ এর সিপিসি-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খাঁন বলেন, এই চক্রটি চাকরিপ্রার্থী পোশাকশ্রমিকদের টার্গেট করে চাকরি প্রলোভন দেখায়। কারখানার ভুয়া জিএম সেজে দেখে করার নামে কৌশলে নির্জন স্থানে নিয়ে জিম্মী করে মুক্তিপণ দাবি করে। মূল পরিকল্পনাকারী ও এই অপরাধচক্র গড়ে তোলার দলনেতা সেন্টু সরদার। তিনি বিভিন্ন কারখানার সামনে চাকরিপ্রার্থীদের টার্গেট করে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করত। পরে অপর আসামী জমির উদ্দিন নিজেকে কারখানার মহাব্যবস্থাপক পরিচয় দিয়ে কৌশলে নির্জনস্থানে ডেকে আনে। পরে চাকরিপ্রার্থীকে জিম্মী করে মারধর ও মুক্তিপণ আদায় করতেন তারা। বাকি আসামিরা তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। চক্রটি গত তিন থেকে চার বছরে অন্তত ৬০টি এমন অপরাধের সাথে জড়িত। সবশেষ আশুলিয়ায় আরিফ নামে এক তরুণকে চাকরি নামে তাকে ডেকে নিয়ে জিম্মী করার চেষ্টা করে। বাধা দিলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তারা। প্রাথমিকভাবে তারা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।
রাকিব মাহমুদ খান আরো বলেন, অপরাধীরা স্বীকার করেছেন যে, তারা সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই এর বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে চাকরিপ্রত্যাশীদের কৌশলে নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতেন। তারা চুরি ও ছিনতাইয়ের সাথেও জড়িত।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি আশুলিয়ার কলতাসূতি এলাকায় নির্জন স্থানে থেকে হাত-বাঁধা বিবস্ত্র অবস্থায় আরিফের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আশুলিয়ায় থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই সূত্র ধরেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।