,

চলনবিলে ‘মাছ ধরতে’ টাকা দিতে হয়!

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ: পাবনা, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ জেলার অংশ জুড়ে চলনবিল। বর্ষা মৌসুমে এই বিলের মাছ শিকারকে কেন্দ্র করেই এই অঞ্চলের জেলেরা তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুমে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নে চলনবিল অংশে জেলেদের চুক্তিভিত্তিক মালিকানা নিয়ে মাছ ধরতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ বছর ধরে এভাবে বিল বিক্রি করে আসছেন আগ দিঘল গ্রামের প্রধানেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চলতি বর্ষা মৌসুমে উধুনিয়া ইউনিয়নের আগ দিঘল গ্রামের বিলের পানির মাছ ধরার জন্য জেলেদের টাকা দিতে হয়েছে। এই বিল থেকে মাছ ধরতে হলে প্রভাবশালীদের টাকা দিতে হয়। প্রভাবশালীদের এমন কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় জেলেরা।

এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় জেলে আব্দুল হাকিমের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘গ্রামের প্রধানেরা যেমন আলম, মান্নান, বর্তমান উধুনিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তোরাপসহ আরও অনেকেই গ্রামের প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের জন্য বিল বিক্রি করে দিয়েছে। আর এই বিলের মধ্যে মাছ ধরার জন্য ৪টি খড়া বাবদ ১ লাখ ৯ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। টাকা দিয়ে এই বিল থেকে আমরা মাছ ধরছি। কিন্তু বিলে তেমন একটা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। উন্মুক্ত বিলেও টাকা দিয়ে মাছ ধরতে হয় আমাদের।’

উধুনিয়া ইউনিয়নের আগ দিঘল গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তোরাপ হোসেন বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এভাবে বিল বিক্রি করা হচ্ছে। আগ দিঘল গ্রামের প্রধান বর্গরা গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান উন্নয়ন করার জন্য এই বিল বিক্রি করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরে স্থানীয় আব্দুল মান্নানসহ প্রায় ১৫ জনের কাছে ২০০ বিঘা বিল ৩ লাখ ২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। মূলত বিল বিক্রির টাকা মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হয়।’

এ বিষয়ে বিলের ক্রেতা মান্নানের সঙ্গে কথা হয়। বিল কেনা–বেচার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এবারে আগ দিঘল গ্রামের প্রায় ২০০ বিঘা বিল ৩ লাখ ২ হাজার টাকা দিয়ে আমরা মোট ১৫ জন কিনেছি। সেই বিলের মধ্যে মাছ ধরার জন্য জেলেদের কাছে খড়া বিক্রি করা হয়েছে। ৪টা খড়া ১ লাখ ৯ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. উজ্জল হোসেন বলেন, ‘যদিও এই বিল আমাদের জল মহালের অন্তভুক্ত নয়। তারপরেও এটি পাবলিক ইজমেন্ট রাইট হওয়ায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিলকে বিক্রি করতে পারবে না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর