চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে নানা অভিযোগের পরও সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন। অর্ধেকের বেশি চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। ৪০টির বেশি অনুমোদনহীন রুটে অবৈধভাবে চলছে ত্রুটিপূর্ণ ও নিবন্ধনহীন কয়েক হাজার গাড়ি।
সেইসঙ্গে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে গণপরিবহনে যাত্রী ওঠানামা এবং একই রুটের অন্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতা চলছেই। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে সড়কজুড়ে যানবাহনে এখন চরম নৈরাজ্য। এসব কারণে সড়কে যানজটের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পাশাপাশি ঘটছে আহত ও অঙ্গহানির ঘটনাও।
ট্রাফিক কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কে উন্নয়ন কাজ, সিগন্যাল বাতি না থাকা এবং চালক, মালিক ও যাত্রীদের অসচেতনতার কারণে যানবাহনে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি মাসে আইন অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলার বিপরীতে জরিমানা আদায় করছে ট্রাফিক পুলিশ। ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আদায় করা হয় ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা। গেল বছর বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে করা হয় ২ লাখ ৬০ হাজার মামলা। যার বিপরীতে ১০ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এত ব্যবস্থা নেয়ার পরও থামছে না আইন ভঙ্গের প্রবণতা।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে তিন ধরনের গণপরিবহনের জন্য ৪৬টি অনুমোদিত রুট আছে। এর মধ্যে অটো টেম্পোর রুট ১৬টি, হিউম্যান হলারের রুট ১৬টি এবং বাস-মিনিবাসের রুট আছে ১৪টি। এসব অনুমোদিত রুটের বাইরে বিভিন্ন শ্রমিক-মালিক সংগঠন মর্জিমাফিক আরও অন্তত ৪০টি অবৈধ রুট সৃষ্টি করেছে। এসব অনুমোদনহীন রুটে চলছে হাজারও যানবাহন। যার অধিকাংশই ত্রুটিপূর্ণ ও বিআরটিএর নিবন্ধন নেই। এসব রুটে যাত্রী পরিবহন, যাত্রী ওঠানামায় নেই কোনো শৃঙ্খলা।
এরপরও কীভাবে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই চট্টগ্রাম বিআরটিএর উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহর কাছে। তিনি বলেন, অনুমোদনহীন রুটে এবং নিবন্ধনহীন যানবাহন কীভাবে যাত্রী পরিবহন করে সে বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করে ট্রাফিক পুলিশ। এর বাইরে বিআরটির ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। এতে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনগুলোকে জরিমানা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি নগরীতে চলাচলরত গণপরিবহনের রুট জরিপ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। এতে বলা হয়, গণপরিবহনে রুট অনুমোদন দেয়া আছে ১ হাজার ১৩৪টি বাস, ১ হাজার ১৪১টি হিউম্যান হলার ও ১ হাজার ৬৬০টি অটো টেম্পোর। এর মধ্যে বাস ৭৭০টি, হিউম্যান হলার ৭৫২টি এবং টেম্পো ৮৬৭টি জরিপে অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৪৮টি বাস, ১২০টি হিউম্যান হলার ও ৪০৮টি টেম্পোর ত্রুটি ধরা পড়ে। এ জরিপে ৩৬৪টি বাস, ৩৮৯টি হিউম্যান হলার ও ৭৯৩টি টেম্পো অংশ নেয়নি। সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানান, ত্রুটি থাকায় যানবাহনগুলো জরিপে অংশ নেয়নি। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও পরে তা হয়নি।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ২ লাখ ২৫ হাজার যানবাহন আছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৪ হাজার জন চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার চালকের লাইসেন্স নবায়ন হয় না দীর্ঘদিন। চট্টগ্রামে বিআরটিএ অনুমোদিত ১৬ ধরনের যানবাহনের মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার আছে মোটরসাইকেল। ৪৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা।
নগরীতে বাস ১ হাজার ১৩৪টি, হিউম্যান হলার ১ হাজার ১৪১টি, অটো টেম্পো ১ হাজার ৬৬০টির অনুমোদন আছে। বাকিগুলো ট্রাক, প্রাইভেট কার, জিপসহ অন্যান্য যানবাহন। প্রতিদিন চট্টগ্রামে ১৫-২০টি নতুন গাড়ির জন্য আবেদন জমা পড়ছে। জানা গেছে, এর বাইরেও একই সংখ্যক যানবাহন অবৈধভাবে সড়কে চলাচল করছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বলেন, নগরীতে যাতে কোনো ধরনের ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ট্রাফিক বিভাগ। প্রতিদিনই ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগে যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।