,

ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন এসআই

পাবনা প্রতিনিধি: জনরোষের মুখে পড়ে দুই প্রবাসীর পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন পুলিশের এসআই (উপ-পরিদর্শক) মিন্টু দাস।

জানা গেছে, সোমবার (২০ জানুয়ারি) পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার পারফরিদপুর গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে সৌদি প্রবাসী মুন্নাফ (২৮) ও একই গ্রামের মৃত শামছুল হকের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী রাসেলকে মাদক সেবনের মামলা থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন এসআই মিন্টু দাস। পরে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলা পরিষদের ভেতরে জনরোষের মুখে সে টাকা ফেরত দেন তিনি। অভিযুক্ত এসআই পাবনার ফরিদপুর থানায় কর্মরত।

মুন্নাফ ও রাসেলের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, এসআই মিন্টু দাস সোমবার সন্ধ্যায় দেওভোগ বিল থেকে মাদক সেবনের অভিযোগে তাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে দুই দফায় ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন ওই এসআই।

মঙ্গলবার দুপুর ১টায় ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আহম্মদ আলী ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে মুন্নাফ ও রাসেলকে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন। এতে দণ্ডিতদের আত্মীয়স্বজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষুব্ধরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিএ’র রুমে এসআই মিন্টু দাসকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ফরিদপুর থানার অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স এসে তাকে উদ্ধার করে।

এ সময় রাসেলের চাচা মুনসুর আলী এসআই মিন্টু দাসকে তাৎক্ষণিক ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এসআই মিন্টু থানায় গিয়ে টাকা ফেরত দিতে রাজি হন। কিন্তু উপস্থিত জনতা এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে এক পর্যায়ে এসআই মিন্টু ২০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। টাকা ফেরত পেয়ে জনতা শান্ত হয়ে তাকে মুক্তি দেন।

গ্রেপ্তারকৃত রাসেলের মা সুজাতা বলেন, আমার ছাওয়াল ৫ দিন আগে বিদেশ থেনে আইছে। তাক টেহার জন্যি পুলিশ ধরে লিয়ে আইছে। মিন্টু পুলিশ আমার ছাওয়ালেক ছাইড়ে দেয়ার কথা কহা ২০ হাজার টেহা লিছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে এসআই মিন্টু বলেন, আমি মাদকের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালাই। তাই আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি কারও কাছ থেকে কোনো ঘুষ গ্রহণ করিনি। তাহলে কিসের টাকা ফেরত দিলেন- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবুল কাশেম আজাদ বলেন, এসআই মিন্টু’র ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি তার জানা নেই। সে অপরাধী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনতার বিক্ষোভের কথা শুনে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানোর বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।

ফরিদপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম কুদ্দুস বলেন, হট্টগোল শুনে আমার রুম থেকে বের হয়ে দেখি ইউএনও’র সিএ’র রুমে এসআই মিন্টু দাস অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। তার বিরুদ্ধে আগেও সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহম্মদ আলী বলেন, দুজন মাদক সেবনকারী তাদের দোষ স্বীকার করলে তাদের প্রত্যেককে ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরে অবশ্য অনেককে বিক্ষোভ করতে দেখেছি।

এই বিভাগের আরও খবর