,

গুরুদাসপুরে গরিবের ঘর মেম্বারদের বাড়িতে

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের বিরুদ্ধে।

প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রকল্পের ঘর গরিবের বাড়িতে নির্মাণ না হয়ে মেম্বারদের বাড়ি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নে ২০১৭ -১৮ অর্থবছরে ‘জমি আছে ঘর নাই’, এমন অসহায় দুঃস্থ পরিবারকে ঘর প্রদান করার কথা থাকলেও সরকারি এ সব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে ইউপি সদস্যদের বাড়িতে।

নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অন্য ঘরগুলোও দেয়া হয়েছে অনেকটাই বিত্তবানদের। ফলে হতদরিদ্ররা এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। হতদরিদ্রদের বদলে ঘর বরাদ্দে স্থান পেয়েছেন সমাজের বিত্তশালীরাও।

সরেজমিন মশিন্দা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার শিকারপুর গ্রামের জসি মোল্লার ছেলে মো. সাহাদৎ হোসেন মোল্লার বাড়িতে ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের ঢেউটিনের চালার ঘর রয়েছে।

৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার শিকারপুর গ্রামের নদীরপাড় এলাকার শামসুর রহমানের স্ত্রী মর্জিনা বেগমের বাড়ি, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার স্বামী পরিত্যক্তা মালেকা বেগমের বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হতদরিদ্রদের ঘর জনপ্রতিনিধির বাড়িতে নির্মাণ হয়েছে। এমন ঘটনায় প্রশাসন নীরব কেন। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের সেবা করার স্থলে নিজেরাই গরিবের আহার চুরি করে খাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে এ ধরনের অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

যোগাযোগ করা হলে ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মর্জিনা বেগম বলেন, তিনি মেম্বার কিন্তু তার স্বামীতো আর মেম্বার না। তাই তার স্বামীর নামে ওই ঘর বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া অন্য মেম্বাররাও নিয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. সাহাদৎ হোসেন মোল্লা জানান, ওই গ্রামের নূরনবীর নামে ওই ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। নূরনবী মারা গেলে ওই ঘর তার বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া তিনি নিজেও গরিব বলে দাবি করেন।

তবে ওই নুরুন্নবীর স্ত্রীসহ ওয়ারিশ রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সব ইউপি সদস্যের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। তারা ওই তালিকার মধ্য থেকে যাদের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন তারাই ওই ঘর পেয়েছেন। মেম্বারদের নাম ওই তালিকায় ছিল না। যারা পেয়েছে তারাও খুব গরিব।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবদুল হান্নান বলেন, উপজেলা ভূমি অফিস যাদের নামের অনুকূলে বরাদ্দ দিয়েছেন তাদের বাড়িতে ওই ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। নাম পরিবর্তন বা একজনের নামে বরাদ্দ অন্যজনের বাড়িতে নির্মাণ করার ক্ষমতা তাদের নেই বলে তিনি জানান।

সহকারী কমিশনার নাহিদ হাসান খান এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি জানলাম, খোঁজ নিয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। কারণ তালিকা তাদের। সেখানে মেম্বারের বা মেম্বারের পরিবারের কারো নাম আছে কিনা সেটা তারাই বলতে পারেন। তাদের নাম তালিকার তারা দিয়েছেন বিধায় এর দায়ভার তাদের।

এই বিভাগের আরও খবর