,

খাল দখলে নিয়ে প্রভাবশালীদের মাছ চাষ

জেলা প্রতিনিধি, খুলনা: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়ানাধীন ওড়াবুনিয়া বিলের মধুমারী ও বিষের খাল-এ অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে কতিপয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে।

১০ এপ্রিল এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম মিঠুসহ ৬৬ জন কৃষক এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, উপজেলার আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী ওড়াবুনিয়া বিল এলাকায় অন্তত দুই হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। ওই জমিতে তারা ধান ও মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বিলের ভেতর দিয়ে বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশন ও শুষ্ক মৌসুমে ধান ও মাছ চাষাবাদের জন্যে মধুমারী ও বিষের খাল নামে দুটি খাল রয়েছে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ চুকনগর গ্রামের প্রভাবশালী আলতাপ হোসেন শেখ, নরনিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, মালতিয়া গ্রামের জব্বার মল্লিক ও আব্দুল হালিম মোড়ল, মাগুরাঘোনা গ্রামের মোক্তার শেখ, জামাল শেখ ও নুর আলী শেখসহ আরো কতিপয় ব্যক্তিরা খাল দুটির বিভিন্ন অংশে অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ, পাটা দিয়ে ভেড়ি তৈরি করে মাছ চাষ করে আসছেন।

যার ফলে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে বিলের একাধিক মৎস্য ঘের ভেসে যায় এবং ধান চাষ ব্যহত হচ্ছে। অপরদিকে মাগুরাঘোনা ইউনিয়ের বেতাগ্রাম, ঘোষড়া, কাঞ্চনপুর, হোগলাডাঙ্গা, মাগুরাঘোনা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী তালা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ খাল দুটিতে বাঁধ দেওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে বিলের কয়েক হাজার কৃষক তাদের উৎপাদিত ধান ও মাছ চাষাবাদের জন্য পানি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ভুক্তভোগী কৃষকদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

কৃষকরা জানান, ২০০৩ সালের দিকে এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপট দেখিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তিরা সরকারি নদী-খাল জবর-দখল করে অবৈধভাবে ঘের তৈরি করে ভোগ-দখল করে আসছে। ২০১৮ সালের দিকে অতি বর্ষণে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য নায়ারণ চন্দ্র চন্দের নির্দেশনায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে দু’টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও এলাকার সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্হা করেন।

এর কিছুদিন যেতে না যেতে সেই অবৈধ দখলদাররা পুনরায় খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্তদের একজন আলতাপ শেখ বলেন, বিলে তার অনেক জমি। তাই যাতে খাল দিয়ে লবণ পানি এসে ধানের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য খালে বাঁধ দিয়েছেন। চার বছর আগে একবার এলাকার লোকজন বাঁধ কেটে দেওয়ার কারণে সমস্ত বিলে লবণ পানি ঢুকে ধানের ক্ষতি করেছিল। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানালে তিনি আবারও বেঁধে দিতে বলেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সরকারি খালের জমি দখলে নিয়েছেন! বন্দোবস্ত নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো বন্দোবস্ত নেওয়া হয়নি। তার পূর্ব পুরুষরা এখানে বাঁধ দিয়ে ঘের করে আসছিল। তাই তিনিও সেই ধারাবাহিকতায় দখলে আছেন।

এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুর রহমান এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে এসিল্যান্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর