,

কোটি টাকার টেন্ডারে বিএনপি নেতার কারসাজি

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার তিনটি উন্নয়ন কাজের কোটি টাকার ইজিপি টেন্ডারের লটারি উপেক্ষা করে নিজের লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন মাহমুদুর রহমান রিপন নামে এক বিএনপি নেতা। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য-সচিব। তাছাড়া অনুমতি ছাড়াই জেলা পরিষদের ঘাটলা খুলে নিয়ে যাচ্ছেন কাজ কেনা ওই ঠিকাদার।

বুধবার সরেজমিনে কোম্পানীগঞ্জ গিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর সঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী কাজী কামরুল ইসলাম ও বসুরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইয়াছিনসহ উধ্বর্তনরাও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরের আরসিসি সড়ক ৪১ লাখ ১৯ হাজার ৪০৯ টাকা, জেলা পরিষদের বসুরহাট ডাকবাংলো গাইডওয়াল ও আরসিসি সড়ক ৩১ লাখ ২৭ হাজার ১৭২ টাকা, পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কোম্পানীগঞ্জ মডেল হাইস্কুল (কেজি) সংলগ্ন আরসিসি ড্রেন, হইদ বাড়ি থেকে মোফাজ্জল সড়ক আরসিসি এবং ২ নম্বর ওয়ার্ড কালামিয়া সওদাগরের পুরাতন বাড়ি আরসিসি সড়ক ৩৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৬ টাকাসহ মোট এক কোটি ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮৭ টাকার ইজিপি টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

এতে ১৪ জন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে হামিদ এন্টারপ্রাইজকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় ইজিপি টেন্ডার লটারির সময়ও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারদের ডেকে সময়মতো লটারি না করে সমঝোতায় কাজ বিক্রি করার কথা জানান উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন। তিনি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লটারি বন্ধ রেখে টেন্ডারের মৌখিক ডাক তোলেন। এতে শিবলু নামে এক ঠিকাদার ১৫ শতাংশ টাকায় কাজটি কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে বিকেল ৫টায় লটারি করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

এতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরের আরসিসি সড়ক মোহন ট্রেডার্স, জেলা পরিষদের বসুরহাট ডাকবাংলো গাইডওয়াল ও আরসিসি সড়ক রিয়াদ এন্টারপ্রাইজ এবং পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কোম্পানীগঞ্জ মডেল হাইস্কুল (কেজি) সংলগ্ন আরসিসি ড্রেন, হইদ বাড়ি থেকে মোফাজ্জল সড়ক আরসিসি এবং ২ নম্বর ওয়ার্ড কালামিয়া সওদাগরের পুরাতন বাড়ি আরসিসি সড়ক স্বপন ট্রেডার্স লটারিতে কাজ পায়। কিন্তু লটারিপ্রাপ্ত ঠিকাদারদেরকে কাজ না দিয়ে টাকা নিয়ে শিবলুকে কাজগুলো করতে বলেন বিএনপির নেতা মাহমুদুর রহমান রিপন।

বুধবার বিকেলে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঠিকাদার শিবলু তার লোকজন দিয়ে বসুরহাট ডাকবাংলোর সরকারি ঘাটলা খুলে ইট-সুরকি নিয়ে যাচ্ছেন। পৌরসভা থেকে কাজ করার অনুমতি না দিলেও বিএনপি নেতার নিয়োগ করা ঠিকাদার শিবলু পৌরসভার কাজ শুরু করেছেন বলে জানান।

ঘাটলা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পৌরসভার কাজগুলো ১২ শতাংশ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি। আর ঘাটলা খুলে নিতে ইউএনও-প্রকৌশলী আমাকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, বসুরহাট পৌরসভার এ কাজগুলো শুরুতেই পাঁচ শতাংশ কমে টেন্ডার নেওয়া হয়। তার উপর বিএনপির নেতা নিয়ে গেলেন ১৫ শতাংশ এবং সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স ১৫ শতাংশ বাদ দিয়ে অফিসের খরচ দিতে হয় আরও পাঁচ শতাংশ। এরপর ১০ শতাংশ ঠিকাদারের জামানত। মোট ৫০ শতাংশ টাকা এখনি বাদ গেলো। সঠিক কাজ করার সুযোগ কোথায়?

বসুরহাট ডাকবাংলোর কাজ পাওয়া রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের মালিক রিয়াদ হোসেন বলেন, আমার লাইসেন্সে পাওয়া কাজটি আমি করছি না। এটি উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন নিয়ে গেছেন। এখন কাজটি তিনি করছেন নাকি বিক্রি করে দিয়েছেন তা আমর জানা নাই।

ঠিকাদার শিবলু বলেন, আমি ১২ শতাংশ টাকা দিয়ে কিনে এখন কাজগুলো করার চেষ্টা করছি।

বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান রিপন কাজ বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমার লোক দিয়ে রিয়াদ এন্টারপ্রাইজের নামে লটারি দিয়ে একটি কাজ পেয়েছি। কাজটি আমি ১৫ শতাংশ টাকা নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছি। আমার কাজ আমি বিক্রি করে দিলে দোষ কোথায়?

তিনটি কাজ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির এ নেতা গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে আলাপ করবো।

বসুরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইয়াছিন দাবি করেন, ইজিপি টেন্ডার স্বচ্ছ সুন্দরভাবে লটারি করে প্রাপ্ত ঠিকাদারদেরকে কাজ করার অনুমতির প্রক্রিয়া চলছে। বাইরে কে কী করলো তা আমাদের জানা নাই। শিবলুকে আমরা চিনি না, যারা কাজ পেয়েছেন তাদের নামেই কাজের অনুমতি দেওয়া হবে। আর ঘাটলা খুলে নিতে বলার বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে নেই।

উপজেলা প্রকৌশলী কাজী কামরুল ইসলাম বলেন, আমি বসুরহাট পৌরসভার টেন্ডার কমিটির সদস্য কিন্তু কাজের ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। স্বচ্ছতার জন্য ইজিপিতে টেন্ডার লটারি করা হয়। এতে কোনো অনিয়ম হলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামিম বলেন, ইজিপি টেন্ডার বিক্রি করার সুযোগ নেই। যার নামে লটারিতে কাজ উঠেছে তাকেই করতে হবে। অন্যথায় কাজ বাতিল করা হবে। দেরিতে লটারি দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে ডাকবাংলোর ঘাটলা খুলে নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নাই। জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।

জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো. সামছুল আলম বলেন, জেলা পরিষদের বসুরহাট ডাকবাংলোর ঘাটলা কারা খুলে নিচ্ছে তা আমার জানা নেই। আমাদের এসব মালামাল বিক্রির বিষয় টেন্ডারের মাধ্যমে হবে। আমরা সেরকম কোনো টেন্ডার দিইনি। এটিতো হরিলুটের মাল নয় যে যে কেউ নিয়ে যাবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর