জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: দেশে আলু চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদিত হয়। তাই কৃষক আলুর ভাল দাম পান না। আলু চাষ করে কৃষককে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হয়। এ অবস্থা নিরসনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) নতুন জাতের আলু নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এসব জাতের আলু কৃষিতে সমৃদ্ধি আনবে। প্রচলিত জাতের তুলনায় নতুন জাতের আলু দ্বিগুন ফলন দেবে। এ আলু বিদেশে রফতানী করা যাবে। শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী এ আলু অধিক দামে বিক্রি করে কৃষক লাভবান হবেন।
গোপালগঞ্জে নতুন জাতের আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েল পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এএফএম হায়াতুল্লাহ এ তথ্য জানান।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, মান সম্মত আলু বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জের সোনাকুড় গ্রামের কৃষক মো. রেজাউল হক সিকদারের ২ একর জমিতে নতুন জাতের আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েল করা হয়। প্রচলিত আলু প্রতি হেক্টরে ২২ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। কিন্তু নতুন জাতের আলু ৪০ থেকে ৫৩ টন পর্যন্ত ফলন দিয়েছে। এ জাতের আলু চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হবেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের দেশে ১ কোটি ১০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়। আমাদের আলুর চাহিদা রয়েছে ৮০ লাখ টন। ৩০ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকছে। রাশিয়া আমাদের আলু নিতে চাচ্ছে। তারা আলু নিলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের আলুর চাহিদা বাড়বে। দেশের বাজারে আলুর দাম বৃদ্ধি পাবে। কৃষক আলুর ভাল দাম পাবেন বলে আমরা আশা করছি। এ জন্য আমরা নতুন জাতের আলু চাষাবাদ সম্প্রসারণের কাজ করছি।’
মানসম্মত আলু বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদার করণ’ প্রকল্পের পিডি মো. আবীর হোসেন বলেন- সান্তানা, সানসাইন, ডোনাটা, কুইনএনি, প্রাডা, প্রিমাভেরা, আডাটো, রাশিদা, সেভেন ফোর সেভেন, এডিসন, ক্যারোলাস, মিউজিকা, ফরিদা, গ্রানোলা, ডায়মন্ট, বারি ৪১, এ্যাস্টারিক্স, বারি ৩৫. বারি ৭৯, বারি ৩৭ জাতের আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েল করা হয়েছে। সেখানে নতুন জাতের আলুর বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে। এ জাতের আলুর বহুমুখী ব্যবহারের যোগ্যতা রয়েছে। এ আলু রফতানীযোগ্য।
তিনি আরো বলেন, নতুন জাতের আলুতে প্রচুর পরিমান ড্রাই উপাদান রয়েছে। তাই এ আলু শিল্পে ব্যহৃত হবে। নতুন জাতের আলু চাষ করে কৃষক দ্বিগুনেরও বেশি ফলন পাবেন। এছাড়া বিদেশে রফতানির পাশাপাশি শিল্পে এ আলু ব্যহৃত হবে। তাই প্রচলিত জাতের তুলনায় এ জাতের আলু বেশি দামে বিক্রি হবে। অধিক ফলন পেয়ে বেশি দামে আলু বিক্রি করে কৃষক লাভবান হবেন।
গোপালগঞ্জ বিএডিসির উপপরিচালক দীপংকর রায় বলেন, ‘আমরা গোপালগঞ্জে বীজ আলু ও রফতানি যোগ্য আলু উৎপাদন করছি। এ বছর ২ শ’ একরে বীজ আলু উৎপাদন করেছি। ১০ একরে রফতানিযোগ্য আলু উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া ২ একরে ২০ জাতের আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েল করা হয়েছে। বীজ আলু ও রফতানি যোগ্য আলু উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হয়েছেন। আলুর মাল্টি লোকেশন পারফর্মেন্স ট্রায়েলেও ব্যাপক সাফল্য এসেছে। নতুন জাতের আলুর চাষাবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষিতে সমৃদ্ধি আসবে।
গোপালগঞ্জের সোনাকুড় গ্রামের কৃষক মো. রেজাউল হক সিকদার বলেন, ‘নতুন জাতের আলু প্রচলিত আলুর চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি ফলন দিয়েছে। এ আলুতে রোগবালাই নেই। স্বাভাবিক পরিচর্যায় এ আলু ভাল ফলন দেয়। পরিবর্তিত আবহাওয়ায় নতুন জাতের সব আলু খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তাই এ আলু চাষ করে আমি অধিক ফলন পেয়েছি। আমার ক্ষেতের আলু দেখে অনেকেই আগামী বছর এসব জাতের আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’