জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাজপাট ডিগ্রি কলেজে এইচএসসির নির্বাচনী পরীক্ষার ফল নিয়ে নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ফরম পূরণ বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (২৩ জুলাই) কলেজের অফিস কক্ষের দরজায় তালা দিয়ে ২ ঘন্টা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গর্ভনিং কমিটির সিদ্ধান্ত ইংরেজীতে ২০ নম্বরের কম পেলে তাকে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হবে না। কিন্তু গর্ভনিং বডির সদস্য নিজাম শেখের ছেলে মাহিন শেখ ইংরেজিতে মাত্র ১২ পেলেও শিক্ষকরা অনিয়ম করে তাকে ২০ নম্বর দিয়েছেন। একই অনিয়ম করার অভিযোগ উঠেছে তমাল শেখ নামে এক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও। ১৬ পেলেও তাকে ফরম পূরণের সুযোগ দিতে ২০ নম্বর দেখানো হয়েছে। এছাড়া খাতা পুনঃমূল্যায়নের নামে কারসাজি করে ৪৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জনকে পুনরায় পাস করানো হয়েছে। যা সভাপতিকে না জানিয়ে করা হয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের এইচএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় ২৯০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এরমধ্যে মাত্র ৮৯ জন কৃতকার্য হন। বাকী ২০১ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্র্য হন।
ওই কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া ইসলাম রিতু অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি অন্যান্য সব বিষয়ে পাশ করি। কিন্তু ইংরেজীতে ২২ পেয়ে অকৃতকার্য হই। তবে ম্যানেজিং কমিটিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি কলেজে ফরম পূরণ করতে গেলে আমার নম্বরপত্রে আইসিটি বিষয়ে ৪৪ নম্বরের স্থানে ২৪ লিখে ফেল দেখান শিক্ষকরা।’
অকৃতকার্য শিক্ষার্থী তামান্না, মিতু, আনিকা ও শাহনাজ খানম জানান, শিক্ষকরা স্বজনপ্রীতি করে কিছু শিক্ষার্থীকে ফরম পূরণের সুযোগ দিয়েছেন। তারা খাতা পুনঃমূল্যায়নের নামে কারচুপি করেছেন। সুযোগ দিলে সবাইকে দিতে হবে বলে তাদের দাবি।
কলেজের গভনিং বডির সদস্য রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করেছেন, সেটা সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত। কারণ যাদের বোর্ড পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তারাতো অকৃতকার্য হয়েছে। তাদের যদি সুযোগ দেওয়া হয়। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবে না কেন। ২০ নম্বর পেলে যাদেরকে পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষকরা অনিয়ম-দুর্নীতি করে সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষকরা এদের (আন্দোলনকারী) কথা শুনছেন না। যে কারণে তারা আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছেন।’
কলেজের গর্ভনিং বডির সভাপতি কানতারা কে খান বলেন, ‘কোন ধরণের অনিয়মের সুযোগ দেওয়া হবে না। আমি ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা সভা করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি নির্বাচনী পরীক্ষায় কেউ অকৃতকার্য হলে, তাকে কোনভাবেই ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হবে না। আমি কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে যা যা করার দরকার করবো। কিন্তু আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কোন ধরণের অনিয়মকে প্রশ্রয় দেব না।’
কলেজ অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। তবে ২০ ওপরে নম্বর পেয়েছে। তাদেরকে ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে ২০ নম্বরের নিচে পেলে তাদের কোনভাবে ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আমি আমার গর্ভনিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেছি। ফরম পূরণে সুযোগ না দেওয়ায় অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা অফিস কক্ষের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়ে আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং তালা খুলে আমাদের মুক্ত করে।’
-লিয়াকত হোসেন লিংকন