আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটিতে জোর গতিতে টিকা কর্মসূচি চালানো হলেও গবেষণা বলছে- ডবল মিউট্যান্ট হওয়া ভারতের করোনার এই ধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন টিকা নেওয়া মানুষও। এমনকি ভারত ছাড়িয়ে এই ধরন ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। তাই করোনার এই ধরন নিয়ে চিন্তিত সারা বিশ্ব।
ভারতে শনাক্ত ভাইরাসের এই ধরনটি অনেক বেশি সংক্রামক। গত বছর করোনা মহামারির শুরুতে ভারতে দৈনিক ৯০ হাজারের কিছু বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি প্রতিদিন তিন গুণ বেশি মানুষকে সংক্রমিত করছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত মার্চ মাসের শেষের দিকে ভারতে করোনার নতুন ও ডবল মিউটেশনের খোঁজ মেলে। এরপর থেকেই দেশটিতে সংক্রমণ বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে এসে যা এখন চরম আকার ধারণ করেছে। নতুন প্রজাতির ‘ই৪৮৪কিউ ও এল৪৫২আর’র প্রভাবেই সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, করোনার এই নতুন ধরনটি তুলনামূলকভাবে বেশি সংক্রামক। ভারতের ১৮টি রাজ্যের পর তা শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। শুধু তাই নয়, টিকা গ্রহণ করা ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধও ক্ষমতা কিছুটা হলেও ভাঙতে সক্ষম ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি। আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এমন ব্যক্তিকেও আবার আক্রান্ত করতে সক্ষম ভাইরাসের ডবল মিউটেশান। তাই বিজ্ঞানীরা ভারতের করোনার এই ধরন নিয়ে বেশি চিন্তিত।
ভারতে পাওয়া ডবল মিউটেন্ট প্রজাতির এই করোনাভাইরাস নিয়ে ব্রিটেন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউইয়র্কে গবেষণা হয়েছে। নতুন এই ধরনটি ঠিক কতটা বিপজ্জনক, তা জানতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।
ভারতে এখনো পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তদের শরীরে মূলত ভাইরাসের তিনটি বিদেশি ধরন পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ব্রিটেনে শনাক্ত ধরন। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে শনাক্ত ধরনও পাওয়া গেছে।
মূল ভাইরাস থেকে চরিত্র পরিবর্তন করা ওই নতুন প্রজাতিগুলোকে প্রতিরোধ করতে কোভিশিল্ড টিকা কতটা কার্যকর, তা নিয়েও পরীক্ষা করেছেন ব্রিটেনের একদল বিজ্ঞানী। পরীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিশিল্ড নেওয়ার পরেও ভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, মহারাষ্ট্রে যে নতুন ডবল মিউটেন্ট প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে, তা ঠেকাতে ভারতের দুই টিকা- কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন আদৌ সক্ষম কি না।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ জন। যা সোমবারের তুলনায় প্রায় ১৪ হাজার কম। সংক্রমণের এই রেকর্ড বৃদ্ধিতে দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখের ঘর।
সোমবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৬২৫ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হলেও মঙ্গলবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৬১ জনে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৩০ জনে।