জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি: সরকারি কর্মচারী বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ বাগিয়ে নিয়েছেন এক সরকারি কর্মচারী। অংশগ্রহণ করছেন দলীয় নানা কর্মসূচিতেও।
এ নিয়ে উপজেলায় নানা আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে বিস্তর।
ঘটনাটি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায়। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আবদুর রহমান। আবদুর রহমান প্রায় এক দশক ধরে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ‘পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক’ হিসেবে নিয়জিত আছেন। সেই সঙ্গে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক অনুমোদিত দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যও তিনি।
জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি চাকরি প্রাপ্তির আগে দীঘিনালা কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পদে ছিলেন৷ প্রায় এক দশক আগে তিনি পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে যোগদান করেন। চাকরি পাওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকলেও সম্প্রতি দলীয় সকল কর্মসূচীতে তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়৷ ২০১৯ সালে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ বাগিয়ে নিলেও সেটা এতোদিন আলোচনায় আসেনি। কিন্তু সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মাঝেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সরকারি কর্মচারীর আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯-এর রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ অংশে বলা আছে, সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক কোনো অঙ্গ-সংগঠনের সদস্য বা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না। অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না। অথচ সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ভঙ্গ করে এ কর্মকর্তা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ পেয়েছেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে অভিযুক্ত আবদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বশির আহমেদ রাজু জানান, এ বিষয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলতে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য হিসেবে আবদুর রহমানের নাম রয়েছে স্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির ফরাজি বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীকে কীভাবে কমিটিতে রাখা হয়েছে এ বিষয়ে আমি অবগত নই।’
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ বরণ চাকমা বক্তব্য আবার উল্টো। তিনি বলেন, ‘আবদুর রহমানকে যখন কমিটিতে রাখা হয়েছে তখন তার চাকরি হয়নি। আর সে চাকরি পাওয়ার পর নতুন করে কোনো কাউন্সিল হয়নি।’
অথচ অভিযুক্ত ব্যক্তি চাকরি পেয়েছেন প্রায় এক দশক আগে। এবং সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়েছে ২০১৯ সালে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, বিষয়টি তার কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি চাকুরিজীবী হয়ে আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকার সুযোগ নেই।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, রাজনৈতিক কমিটিতে সরকারি চাকরিজীবীর পদ পাওয়া গঠনতন্ত্র বিরোধী। বিষয়টি তার জানা ছিল না।
দীঘিনালা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. নিটু দেওয়ান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।’