,

উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিন: শেখ হাসিনা

বিডিনিউজ ১০ ডটকম ডেস্ক: উন্নয়নের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়তে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী ট্যানেল, পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করতে চাই। যে পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই সেতু নির্মাণ করতে চাই। দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন? এ সময় উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ দুই হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে হাঁসূচক জবাব দেন।

শুক্রবার বিকালে গুলশান-২-এর ইয়ুথ ক্লাব মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে ঢাকার বিভিন্ন আসনের দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে। সারা দেশে যে জোয়ার উঠেছে, ইনশাআল্লাহ নৌকার জয় হবেই। সরকার গঠন করে মানুষের সেবা করব, উন্নত জীবন দেব- এই ওয়াদা রেখে যাচ্ছি। নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম জনসভা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকা মার্কা মানে উন্নতি-সমৃদ্ধি, ধানের শীষে ভোট দেয়া মানে দুর্নীতি-ধ্বংস ডেকে আনা। ধানের শীষে ভোট মানে ককটেল আর বোমা হামলা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, মানি লন্ডারিং এবং এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কা মানে জনগণের স্বাধীনতা ও ভাগ্যের উন্নতি করা। নৌকা মার্কা মানে এ দেশের মানুষের কল্যাণ, যা চিরজীবন দেশবাসীর প্রাপ্য। কাজেই এটা বিবেচনা করে আমি দেশবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’

বিকাল পৌনে চারটার দিকে নির্বাচনী জনসভাস্থলে এসে পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এই জনসভা ঘিরে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। দুপুর থেকে মহাখালী লিংক রোড হয়ে গুলশান-১ নং গোলচত্বর, বনানী-কাকলী দিয়ে গুলশান-২ নং গোলচত্বর, মধ্যবাড্ডা, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নয়াবাজার, বাড্ডা লিংক রোড হয়ে ওঠে মিছিলের নগরী।

এ সময় নেতাকর্মী-সমর্থকরা বাদ্য বাজনা বাজিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে ও প্রার্থীদের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড পোস্টার নিয়ে নৌকা মার্কার স্লোগানসহ জড়ো হতে থাকে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে। বিকাল তিনটার মধ্যে ক্লাবের এই বিশাল মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চলাকালে মাঠের চারপাশের রাস্তা, উঁচু ভবনের ছাদ থেকেও অনেককে বক্তব্য শুনতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের এই জনসভাকে কেন্দ্র করে এদিন গুলশান এলাকায় যান চলাচল সীমিত ছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকায় ভোট দেয়ার সুফল এখন দেশবাসী পাচ্ছেন। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই স্বাধীনতা এসেছে। মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। নৌকায় মানুষের মুক্তি মেলে।

ঢাকায় পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করেছি- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ঢাকা শহরে এক সময় পানির জন্য হাহাকার ছিল। বিদ্যুৎ ছিল না। লোডশেডিং লেগেই থাকত। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা ছিল। মানুষের চলাফেরায় কষ্ট হতো। ছিনতাই-জঙ্গিবাদ ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পানির সমস্যা সমাধান হয়েছে। এখন পানির কোনো সমস্যা নেই। আল্লাহর রহমতে এখন কোনো লোডশেডিং নেই।

জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমার লক্ষ্য। ঢাকার প্রতিটি এলাকায় বিশেষায়িত হাসপাতাল করেছি। বস্তিবাসীরা ঢাকায় মানবেতর জীবনযাপন করে। তারা এখন যে অবস্থায় বসবাস করছে, তা আর থাকবে না। তারা যেন ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বহুতল ভবন করে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়ার ব্যবস্থা করা হবে। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক যে যেভাবে পারে, ভাড়া পরিশোধ করবে- সে ব্যবস্থা আমরা করব। এজন্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে। নতুন নতুন শহর আমরা নির্মাণ করছি। ঢাকার যেসব ইউনিয়ন ছিল, মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়, সেজন্য সব ইউনিয়নকে দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এনেছি। ঢাকাকে দুই ভাগ করেছি।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। ওই ঘটনায় আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন কর্মী মারা গেছেন। বহু নেতাকর্মী শরীরে স্পি­ন্টারের আঘাত পেয়েছেন। বহু কষ্টের মধ্যে আছেন তারা। যারা মারা গিয়েছেন, তাদের পরিবারের কথা একবার চিন্তা করুন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আমরা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে মানুষের উন্নয়নের কাজ হাতে নিলাম। ৫ বছর দেশের মানুষের কল্যাণে অনেক প্রকল্প নিলাম।

দশম সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। এরপর খালেদা জিয়া তার অফিসে এসে ঘোষণা দিলেন সরকার পতন না হলে তিনি ঘরে ফিরবেন না। সারাদেশে অসংখ্য মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করলেন। বাস ড্রাইভারকে থামিয়ে পেট্রল ঢেলে হত্যা করল। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নিজেরাই একবার চিন্তা করে দেখুন, কোনো মানুষ কি কখনও কাউকে পুড়িয়ে মারতে পারে? তারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা মসজিদে পর্যন্ত আগুন দিয়েছে। সারাদেশে ৩৯০০ গাড়ি পুড়িয়েছে।

বাস পুড়িয়েছে, লঞ্চ পুড়িয়েছে, প্রাইভেট কার পুড়িয়েছে, ট্রেন পুড়িয়েছে, সিএনজি পুড়িয়েছে। বাস, ট্রাকের ভেতর থেকে ড্রাইভার হেলপারদের বের করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থী, ছোট শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। মানুষ জীবন ভিক্ষা চেয়েছে, তারা দেয়নি। এরপর মানুষ যখন প্রতিরোধ গড়ে তুলল তখন নাকে খত দিয়ে ঘরে ফিরে গেলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। মানুষ তার ডাকে সাড়া দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই অমানুষরা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অর্থ পাচার করেছে। খালেদা জিয়ার দুই ছেলে অর্থ পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে বিলাসবহুল জীবনের কী অর্থ থাকতে পারে? দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ১০ ট্রাক অস্ত্র তারা কী করেনি? অথচ তারা এখন ধানের শীষে ভোট চায়। মানুষকে যারা মানুষ বলে গণ্য করে না, তারা কীভাবে আবার ধানের শীষে ভোট চায় আপনারা বলেন।

জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের কোনো স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। তিনি বলেন, গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় মাত্র ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে জঙ্গিদের দমন করেছি। এ ঘটনার পর থেকেই জঙ্গি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। জঙ্গি ও মাদকের হাত থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য তিনি অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান ।

সরকার পরিচালনায় হাওয়া ভবন খুলে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওয়া ভবন খুলে আওয়ামী লীগ কোনো দুর্নীতি করেনি। করবেও না। হাওয়া ভবনের খাওয়া মেটাতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আমরা সরকার পরিচালনা করি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। এতিমের টাকা আমরা আত্মসাৎ করি না। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছিল খালেদা জিয়া। এই মামলা করেছিল তারই পছন্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর সেই মামলায় সাজা পেয়ে আজকে তিনি কারাগারে।

বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে বর্তমান সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আধুনিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করতে ক্ষমতায় আসে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী দল হিসেবে বিএনপিকে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এতিমের টাকাও নিরাপদ নয়। আজকে তিনি সাজা পেয়ে কারাগারে। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে, এটা তো কোরআন শরিফেই লেখা আছে। এতিমের অর্থ, এতিমের সম্পদ চুরি করে খেয়ো না। এটা কোরআন শরিফের বিধান। সেটাও তারা মানে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। এই দুই বছর মুজিব বর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। আমরা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে চাই, তখনই পালন করতে পারব, যখন আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসব। নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আমরা জনগণের সেবা করত পারব। আপনারা আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন। আমরা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকব।

দলের ইশতেহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের আরেকবার সুযোগ দিন, দেশের শান্তি-নিরাপত্তার জন্য, দুর্নীতি দমন করার জন্য। আমরা ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছি, দেশের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দূর করব। দুর্নীতি দূর করব। মানুষের কল্যাণ করব। বিশেষ করে তরুণ সমাজের জন্য খেলাধুলা, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক উন্নতি করে দিয়েছি। আমরা ক্রিকেট, ফুটবল খেলাধুলায় এগিয়ে যাচ্ছি। তরুণ ও যুব সমাজের মেধা, শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশ গড়ব।

বক্তৃতার এক পর্যায়ে ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, ঢাকা-১১ আসনের প্রার্থী একেএম রহমতউল্লাহ, ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ সাদেক খান, ঢাকা-১৬ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা-১৮ অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা-১৪ আসনে আসলামুল হক আসলাম, ঢাকা-১৫ কামাল আহমেদ মজুমদার উপস্থিত না থাকলেও তাদের পক্ষে ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী সালমান এফ রহমানকেও পরিচয় করিয়ে দিয়ে নৌকা ভোট চান শেখ হাসিনা। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে উত্তর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।

নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৩ দলীয় প্রার্থী সাদেক খান, ঢাকা-১৬ আসনের দলীয় প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর