ইসলাম ডেস্ক: ৩০তম রোজার ইফতারের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হবে ১৪৪৩ হিজরির রমজান মাস। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হবে শাওয়াল মাস। শাওয়াল মাসের প্রথম রাতের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। এ রাতকে ‘ঈদের রাত’ বা ‘চাঁদ রাত’ বলা হয়। এ রাতের ইবাদতকারীর জন্য নবিজী ৩টি বিশেষ মর্যাদা ঘোষণা করেছেন। যা অন্য কেউ পাবে না। কী সেই ৩ বিশেষ মর্যাদা; যা চাঁদ রাতের ইবাদতকারীদের জন্য নির্ধারিত?
রমজান মাস শেষে প্রথম যে রাত আসে কিংবা যে রাত পার হলেই ঈদ উদযাপিত হয় সেই রাতই ‘চাঁদ রাত’। এ রাতের ইবাদত-বন্দেগির ফজিলত ও মর্যাদা রমজানের তুলনায় কম নয়। কেননা এ রাতেও রহমত ও সৌভাগ্য নাজিল হওয়া অব্যাহত থাকে।
এ রাতের ইবাদতকারীর কোনো দোয়া আল্লাহ ফেরত দেন না। এ রাতের ইবাদতকারীর জন্য জান্নাত ওয়াজিব। এ রাতের ইবাদতকারীর অন্তর কখনো মরবে না। তাই রোজাদার, ইতেকাফকারী, ইবাদতকারী বান্দারা এ রাতটিও ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-
১. চাঁদ রাতের দোয়া ফেরত দেবেন না
আল্লাহ তাআলা এ (চাঁদ) রাতের ইবাদত-বন্দেগি এবং কোনো দোয়াই ফেরত দেন না। এ রাতে বান্দা যা চায়; তা-ই পায়। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘(দুনিয়াতে) পাঁচটি রাত এমন আছে; যে রাতগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন না। অর্থাৎ বান্দার দোয়া কবুল করেন। রাতগুলো হলো-
১. (সপ্তাহিক) জুমার রাত;
২. রজব মাসের প্রথম রাত;
৩. শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত,
৪. ঈদুল ফিতরের রাত এবং
৫. ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নেফে আবদুর রাজ্জাক)
২. চাঁদ রাতের ইবাদতে জান্নাত ওয়াজিব
অন্য এক হাদিসের বর্ণনায় ঈদের আগের রাত তথা চাঁদ রাতের ইবাদতকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাত ওয়াজিব করে দেন বলে ঘোসণা করা হয়েছে। হাদিসের এক বর্ণনায় ওঠে এসেছে-
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত (ইবাদতের মাধ্যমে) জেগে থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। তাহলো-
১. জিলহজ মাসের ৮ তারিখের রাত৷
২. জিলহজ মাসের ৯ তারিখের রাত (আরাফার রাত)
৩. ঈদুল আজহার রাত।
৪. ঈদুল ফিতরের রাত এবং
৫. অর্ধ শাবানের রাত।’ (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)
৩. চাঁদ রাতের ইবাদতকারীর অন্তর মরবে না
চাঁদ রাতের ইবাদতকারীদের সম্পর্কে একটি বিশেষ মর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছে। এ রাতের ইবাদতকারীদের অন্তর মরবে না। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-
১. হজরত আবু উমামা বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর কাছে সাওয়াব পাওয়ার নিয়তে ইবাদত করবে, তার অন্তর সেদিনও জীবিত থাকবে, যেদিন সকল অন্তরের মৃত্যু ঘটবে।’ (ইবনে মাজাহ)
২. হজরত উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার রাতকে (ইবাদতের মাধ্যমে) জীবিত রাখবে, তার অন্তরও সেই দিন মরবে না, যেদিন অন্যদের অন্তর মরে যাবে।’ (আল মুজামুল আওসাত)
চাঁদ রাতের ইবাদতের ৩ মর্যাদা : শাওয়াল মাসের প্রথম রাত তথা চাঁদ রাতের ইবাদতকারীর জন্য ৩টি বিশেষ মর্যাদা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাহলো-
১. এ রাতের কোনো দোয়া আল্লাহ ফেরত দেবেন না।
২. এ রাতের ইবাদতকারীর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৩. এ রাতের ইবাদতকারীর অন্তরের মৃত্যু হবে না।
সুতরাং চাঁদ রাতের মুমিন মুসলমান রোজাদার রাতব্যাপী ইবাদত-বন্দেগি করেবে। সাধ্যানুযায়ী নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাওবাহ-ইস্তিগফার এবং দোয়া-দরূদ পড়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করবে।
তবে সতর্কতা হলো
এ রাতগুলোতে আল্লাহর কাছে চাওয়া কিংবা দোয়া করার বিষয়টি ওঠে আসলেও সুনির্দিষ্ট কোনো নামাজ বা অন্য কোনো আমলের কথা বলা হয়নি। রমজানের অন্যান্য রাতের মতো, তাহাজ্জুদ, নফল নামাজ, সালাতুত তাসবিহ ও কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার এবং ক্ষমা-প্রার্থনায় রাতটি অতিবাহিত করাই উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদুল ফিতরের আগের রাত তথা চাঁদ রাতের আমল-ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত রাখার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করে বিশেষ ৩টি মর্যাদা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।