জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
ওই ইউনিয়ন পরিষদের নয়জন ইউপি সদস্য গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিকট অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন। এরআগে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ইউপি সদস্যদের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন মিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেন। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এলজিএসপি, টিসিবি, ভিজিডি, কৃষি বীজ-সার এবং টিসিবি’র পণ্য বিতরণের ক্ষেত্রে তিনি একাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মাসিক সভায় মূল এজেন্ডা গোপন রেখে ফাঁকা রেজুলেশন খাতায় সদস্যদের স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন। পরে ওই রেজুলেশন খাতায় তার ইচ্ছামত সব কিছু লিখে পাশ করিয়ে নেন। চেয়ারম্যানের এসব কর্মকান্ডের কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের সাথে অসদাচরণ করেন।
মহারাজপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘নামমাত্র কাজ করে লোহাচ‚ড়া বাজার সংস্কারের নামে বাজার-ফান্ডের অনুদানের ২ লাখ, বাজারের একটি রেইনট্রি গাছ ও অন্যান্য কাঠ-খুঁটিসহ আরও ৭০ হাজার টাকা ইউপি চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন মিয়া আত্মসাৎ করেছেন।
১ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কবির মোল্যা অভিযোগ করে বলেন, ‘ভ‚মি রেজিস্ট্রেশনের এক ভাগ টাকা, ট্রেড লাইসেন্স ও হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ আদায়কৃত টাকা চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডপ্রতি ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। টিউবওয়েল দেয়ার নামে ইউনিয়নের বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে ২০ হাজার করে টাকা নেন। বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজার ও সড়কের পাশ থেকে অর্ধশতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। মাটির কাজের প্রকল্পগুলোতে বেআইনীভাবে ভেকু ব্যবহার করেন এবং তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে অন্যের ফসলি জমি থেকে জোর করে মাটি উত্তোলন করে প্রকল্পের রাস্তার উন্নয়নের কাজ করেন। ইটের রাস্তার সলিং তুলে তা দিয়ে রাস্তা পুন:নির্মাণ করে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ইজিপিপি প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব কারণে আমরা সকল ইউপি সদস্য এক হয়ে চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেছি। সর্বশেষ আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছি।’
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রেহানা আক্তার লাকী বলেছেন, ‘চেয়ারম্যান ভিজিডি দেয়ার নামে টিপসহি নেন; কিন্তু কিছুই দেন না। কোন কিছু জিজ্ঞেস করলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। গায়ে হাত তোলেন, ভয়-ভীতি দেখান। কথায় কথায় তিনি বলেন-আমি নৌকাকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদে গেলেই আমাদের লাথি দিয়ে বের করে দিতে চান। অধিকাংশ সদস্য সঙ্গে তিনি এভাবে দাপট দেখান ও অসদাচরণ করেন। আমি এই দূর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করিছি।’
মহারাজপুরের লোহাইড় এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক নাজু সিকদার অভিযোগ করে বলেন, ‘সড়কের উন্নয়নের কাজের জন্য তার জমি থেকে মাটি কাটতে না দেয়ায় চেয়ারম্যানের লোকজনকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয় আমাকে। প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে, তাহলে আমাকে টাকা দিতে হবে কেন।’
ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে কথা হয় ফিরোজা বেগম, সেলিনা বেগম, আনোয়ারা বেগম, হাসি বেগম, ফরিদা বেগমসহ কয়েকজন দুস্থ ও অসহায় নারীর সাথে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা বেকার সরকারি সহযোগিতা পাই না। এমনকি টিসিবি’র পণ্যের তালিকায়ও আমাদের কোন নাম নেই। দ্রব্যমূল্যের বাজারে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সাথে পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যকার অব্যাহত বিরোধের কারণে তারা পরিষদ থেকে নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
অভিযুক্ত মহারাজপুর ইউপি-চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন মিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে বলেন, ‘আমি মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদকে দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ইউনিয়ন পরিষদ হিসেবে গড়তে চেয়েছি। এটা ইউপি সদস্যরা মেনে নিতে পারছেন না। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে সাধারণত ওয়ার্ড পর্যায়ে সবকিছুর তালিকা করেন ইউপি সদস্যরা। সাধারণ নিরীহ মানুষকে ভাতাসহ বিভিন্ন সেফটি নেট প্রকল্পে সুবিধাভোগী হিসেবে নির্বাচন তালিকাভুক্ত করা ও সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা বলে টাকা নেন ইউপি সদস্যরা। আমি যখন এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছি। তখনই আমার বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। গাছ কেটে নেয়া বাজার ও সড়কের উন্নয়ন কাজের দূর্নীতির অভিযোগ সত্য নয়।’
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী মাহ্বুব আলম বলেন, ‘মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে ওই ইউনিয়নের ৯ জন ইউপি সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এসব অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
-লিয়াকত হোসেন লিংকন