মুনীরুল ইসলাম ইবনু যাকির: আত্মীয় শব্দটা ‘আত্মা’ থেকে উদ্ভুত। আত্মার ঘনিষ্ঠতা যার সাথে, তাকেই বলে আত্মীয়। সামাজিক জীব হিসেবে, সংসারী হিসেবে মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে জড়াতে হয়। আর সেই বন্ধন রক্ষা করাটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত জরুরি। ঐশী জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ থেকে বঞ্চিত হবে। ব্যস্ততার এ যুগে, কর্পোরেট লাইফে আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ-খবর রাখাটা খুব দুরুহ ব্যাপার। চলুন, জেনে নেয়া যাক এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে—
‘আর তোমরা আত্মীয়-স্বজনদের (হকের) ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।’ [সুরা নিসা, ৪ : ১]
‘আত্মীয়-স্বজনকে তার হক প্রদান করো এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর অপব্যয় করো না। [সুরা ইসরা, ১৭ : ২৬]
‘যদি তোমরা প্রত্যাবর্তন কর তবে কি তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে, তারা তো ঐ সব লোক যাদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন এতে তিনি তাদেরকে বধির করে দিয়েছেন এবং তাদের অন্তরদৃষ্টি অন্ধ করে দিয়েছেন।’ [সুরা মুহাম্মাদ, ৪৭ : ২২-২৩]
আয়িশা (রা.) থেকে হাদিস এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রেহেম (আত্মীয়তা) আল্লাহর আরশের সাথে ঝুলন্ত। সে বলে, যে আমাকে নিজের সাথে যুক্ত রাখবে, আল্লাহ তাকে যুক্ত রাখবেন। আর যে আমাকে ছিন্ন করবে, আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।’ [মুসলিম, আসসাহিহ : ২৫৫৫]
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জীবিকায় প্রশস্ততা ও আয়ু বৃদ্ধি কামনা করে, সে যেন তার আত্মীয়দের সাথে উত্তম ব্যবহার করে।’ [তিরমিযি, আসসুনান : ২১৩৯]
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ [বুখারি, আসসাহিহ : ৫৯৮৪; মুসলিম, আসসাহিহ: ৪৬৩৩]
কীভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা যায়?
১) আত্মীয়-স্বজনদের দেখতে যাওয়া।
২) তাদেরকে বেড়াতে আসার দাওয়াত দেয়া ও তাদের মেহমানদারি করা।
৩) টেলিফোন, পত্র বা লোকমারফত তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া।
৪) সাহায্য-সহযোগিতা করা, উপহার প্রদান করা।
৫) বড়দের সম্মান করা।
৬) যথাযথ হক ও মর্যাদা রক্ষা করা।
৭) বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ, আনন্দে আনন্দিত হওয়া এবং ব্যথায় ব্যথিত হওয়া।
৮) অসুস্থদের সেবা করা।
৯) জানাযায় শরিক হওয়া।
১০) দাওয়াত দিলে গ্রহণ করা।
১১) পরস্পর ভুল-ক্রটি সংশোধন করা।
১২) তাদের জন্য দুয়া করা ও তাদের কল্যাণ কামনা করা।
১৩) কল্যাণকর কাজে উৎসাহিত করা এবং অকল্যাণকর ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখা।