,

সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর মায়ের ঠিকানা ‘ছাগলের ঘর’

জেলা প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওরে মায়ের কাছ থেকে সম্পত্তি লিখে নিয়ে ৮০ বছরের বৃদ্ধা রহিতন বেগমকে ছাগলের ঘরে রেখে অবহেলা ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বেদেনা বেগম ও আঙ্গুরি বেগম নামে তারই দুই মেয়ের বিরুদ্ধে।

মায়ের নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে সোমবার দুপুরে ঘিওর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই বৃদ্ধার বড় মেয়ে মমতাজ বেগম। এ ঘটনার তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান উপজেলার ভাটরাকান্দি এলাকার ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের পিতা মোসলেম উদ্দিন। তবে মারা যাওয়ার আগে স্ত্রী রহিতন বেগমের নামে ১৬৫ শতাংশ সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান তিনি। ১৬৫ শতাংশের মধ্যে ৬৭.৮৭ শতাংশ জমি দুই ছেলে ও এক মেয়ে লিখে দেন মৃত মোসলেম।

চাকরির সুবাদে দুই ছেলে শহরে ও বড় মেয়ে শ্বশুরবাড়ি সংসার করায় বৃদ্ধা মায়ের কাছে বাবার বাড়িতে স্বামীকে নিয়ে বাবা বসবাস শুরু করেন বেদেনা বেগম ও আঙ্গুরি বেগম। এর মধ্যে মা বৃদ্ধা ও অসুস্থ হয়ে পড়ায় কৌশলে ২০২১ সালে মায়ের নামে থাকা ৯৭.১৩ শতাংশ সম্পত্তি লিখে নেন দুই মেয়ে।

এ বিষয়ে রহিতন বেগমের বড় মেয়ে মমতাজ বেগম বলেন, ‘ছোট বোন বেদেনা ও তার স্বামী রেজাউল করিম এবং আঙ্গুরি ও তার স্বামী আনিসুর রহমান আমার মাকে নির্যাতন করত। পরবর্তীতে মাকে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পত্তি লিখে নিয়েছে তারা। সম্পত্তি লিখে নেয়ার পর থেকেই ওরা মাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাকে ঠিকমতো খেতেও দিত না ওরা। এমনকি মাকে ছাগলের ঘরে ছাগলের সঙ্গে রেখে দিয়েছিল।’

এর আগে বিভিন্ন সময়ে মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চাইলেও ওই দুই বোন ও বোনের জামাইরা নিতে দেয়নি বলে অভিযোগ মমতাজ বেগমের। উল্টো বাপের বাড়িতে গেলে তার সঙ্গে তারা (দুই বোন) দুর্ব্যবহার করত বলে জানান তিনি।

‘ঘটনা সত্য’ জানিয়ে প্রতিবেশী সামেলা বেগম বলেন, ‘রহিতন বেগম রাত-দিন ক্ষুধার যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করতেন। মাঝেমধ্যে আমরা প্রতিবেশীরা খাবার দিয়ে আসতাম। কিন্তু বৃদ্ধার মেয়ে ও জামাইদের দুর্ব্যবহারের কারণে আমরা তাকে আর খাবার দিতে যাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুধার যন্ত্রণায় চিৎকার বা কান্নাকাটি করলে রহিতন বেগমকে তার মেয়েরা বকাবকি ও মারধর করতেন। এসব নিয়ে স্থানীয়ভাবে ও থানায় বেশ কয়েকবার শালিস-বিচার হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা পাল্টায়নি।’

রহিতন বেগমের ছোট ছেলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাকে আমাদের কাছে আনার জন্য একাধিকবার বোন ও দুলাভাইদের অনুরোধ করেছি। স্থানীয়ভাবে এবং থানায় একাধিকবার এ বিষয় নিয়ে বসা হয়েছে। তারপরও ওরা মাকে নির্যাতন বন্ধ করেনি।’

তিনি বলেন, ‘মাকে না খেতে দিয়ে, ছাগলের ঘরে রেখেছিল ওরা। ছেলে হয়ে চোখের সামনে মাকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখছি, কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। প্রশাসন ও স্থানীয়দের মাধ্যমে মাকে আমাদের কাছে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আপনারা আমার মাকে বাঁচান।’

তবে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে মেয়ে বেদেনা ও আঙ্গুরি বেগম বলেন, ‘আমাদের সাধ্যমতো আমরা মায়ের সেবা-যত্ন করে আসছি। মা বয়স্ক ও অসুস্থ হওয়ায় হাঁটাচলা করতে পারে না। বিছানায় খায়, বিছানায় প্রস্রাব-পায়খানা করে। এ কারণে মাকে আলাদা রাখা হয়েছে। তবে আমরা সব সময় মায়ের খোঁজখবর রাখি।’

‘মায়ের কাছ থেকে জমি বা সম্পত্তি জোর করে লিখে নেয়া হয়নি’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘মা আমাদের সঙ্গে থাকত। এ কারণে আমাদের দুই বোনকে ভালোবেসে লিখে দিয়েছেন। এখন এটা নিয়ে অন্য ভাইবোনেরা থানায় লিখিত অভিযোগ করলে আমরা কী করব।’

এ বিষয়ে ঘিওর থানার ওসি আমিনুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মা-বাবাকে নির্যাতন বা ভরণপোষণ না করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর