জেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে মামলায় লড়ছেন দু’জন। এই পদ রক্ষায় বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ২১ লাখ ২০ হাজার ৭৬৫ টাকা খরচ করেছেন তাদের একজন।
এ ঘটনা ঘটেছে সীতাকুণ্ডের মাদামবিবিরহাট শাহজাহান উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান।
অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে-বিদ্যালয়ের সভাপতি দাবিদার মোহাম্মদ আলম, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী, সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী আজম, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবদুল করিমের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন শামশুল আলম। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে তাঁর সভাপতি পদ প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। পরে সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলমকে ওই পদে দায়িত্ব দিয়ে পরিপত্র জারি করে। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গিয়ে সভাপতি পদ ফিরে পান শামশুল আলম। এরপর আদালতে আপিল করেন মোহাম্মদ আলম। তবে গত মার্চ মাসে তাঁর আপিল আবেদন খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে নির্দেশ দেন আট সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে রিট করতে। সুপ্রিম কোর্টে আর রিট করেননি তিনি। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি পদ নিয়ে মামলায় লড়তে গিয়ে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে বিপুল অর্থ খরচ করেছেন সভাপতি দাবিদার মোহাম্মদ আলম। অথচ নীতিমালায় রয়েছে– বিদ্যালয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা ছাড়া অন্য কোনো মামলায় বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে অর্থ খরচ করা যাবে না।
দু’জনের মামলার জটিলতায় কয়েক মাস বেতন-ভাতা বন্ধ ছিল। এক পর্যায়ে শামশুল আলম আদালতে আবেদন করেন যেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষরে বেতন-ভাতা তোলা যায়। আদালতের নির্দেশে এখন পর্যন্ত ইউএনওর স্বাক্ষরেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন উত্তোলন করা হচ্ছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দাবিদার শামশুল আলম বলেন, ‘বিধি মোতাবেক সভাপতি পদ রক্ষা করতে মামলার খরচ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই বহন করতে হবে। ব্যক্তিগত কাজে বিদ্যালয়ের অর্থ খরচ করার সুযোগ নেই। অথচ অনিয়মের মাধ্যমে মামলার খরচ চালাতে বিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা সরিয়েছেন সাবেক সভাপতিসহ চারজন।’
সাবেক প্রধান শিক্ষক আলী আজম বলেন, ‘আমি দায়িত্বে থাকাকালে মামলার খরচের কোনো টাকা বিদ্যালয় তহবিল থেকে দেওয়া হয়নি। আমি অবসরে যাওয়ার পর যারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন তারাই অনিয়ম করেছেন বলে শুনেছি।’
তবে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ড আমাকে সভাপতি হিসেবে চিঠি দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত আমি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শামশুল আলম উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই মামলায় আপিল করেছেন। সেই হিসেবে উচ্চ আদালতের আপিল মামলার খরচ বিদ্যালয় বহন করেছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলীর কাছে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে টাকা খরচ করে সভাপতি পদ নিয়ে মামলা পরিচালনার সুযোগ নেই। তবে বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট কোনো মামলা হলে নীতিমালার আলোকে অনুমোদন সাপেক্ষে বিদ্যালয় তহবিল থেকে অর্থ খরচ করা যেতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-২ এর উপপরিচালক আতিকুল আলমের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, অভিযোগগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়। এরপর তদন্ত করা হয়।
সীতাকুণ্ড উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা আলম সরকার জানান, সভাপতির পদ রক্ষায় যিনি মামলা বা আপিল করবেন তিনিই খরচ বহন করবেন। বিদ্যালয় তহবিল থেকে অর্থ খরচ করার সুযোগ নেই।