আমিনুল ইসলাম আশিক: অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের একটি অন্যতম মাধ্যম হল ফেসবুক। এর ব্যবহার মানুষের যোগাযোগকে সহজ করেছে। বিশ্বের যে কোনো স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বন্ধুদের কাছে টেনে নেয়ার সুযোগ এ মাধ্যমটিই করে দিয়েছে।
সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হল, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কিছু সময় কাটানোর একটি অন্যতম প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে ফেসবুক। তবে ভার্চুয়াল এ জগৎ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, ততটাই ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব।
অসংখ্য মানুষ ফেসবুকের কারণে হতাশায় ভুগছেন, এমনটাই মনে করেন গবেষকরা। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষক বলেছেন, ফেসবুক মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনলেও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হতাশ হচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে এ হতাশা তরুণ সমাজের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে বেশি।
হাতের মোবাইল ফোনে রাতের অন্ধকারে পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠছে। ঘুম ঘুম চোখে রঙিন দুনিয়ার স্বপ্নে বিভোর তরুণরা ক্রমেই ফেসবুক আসক্তিতে জড়িয়ে দিনের কর্মঘণ্টাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। ফেসবুক দুনিয়ায় ভাসছে দেশের তরুণ সমাজ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসামাজিক কর্মকাণ্ড থেমে নেই, আছে রাজনৈতিক নোংরামিও। তবুও ফেসবুক এখন মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। যান্ত্রিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষ ক্রমেই যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে।
তাই মনের আবেগ, অনুভূতি, ব্যক্তিগত ক্ষোভ ইত্যাদির প্রকাশ ঘটছে ফেসবুকে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের দিনের বড় একটা অংশ ফেসবুক দখল করে নিয়েছে। অনেকে রাতের ঘুমকে পর্যন্ত বিসর্জন দিচ্ছে।
দেশে আজ মোবাইল ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বস্তুত এখন যান্ত্রিক যুগে বসবাস করছে মানুষ। মূলত তথ্যপ্রযুক্তির যান্ত্রিক যুগের সূচনা বিগত শতাব্দীর আশির দশকে। ৩০ বছরে পৃথিবী যে রূপ বৈচিত্র্য লাভ করেছে, তা গত ৩০০ বছরেও সম্ভব হয়নি।
ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করেন অনেকেই। এর ফলে অন্য কাজ করার সময় থাকে না বলে জীবনে ও কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে। ফেসবুকে নজর দেয়ার জন্য অনেকে মধ্যরাতে ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠে পড়ে।
অনেকে মনে করে ফেসবুক ছাড়া জীবন অচল। এমনও দেখা যায়, ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেম করে একদেশের নারী বা পুরুষ অন্য দেশে চলে গেছে! অনেকে ফেসবুকের মাধ্যমে বিয়েও করে।
সংক্ষেপে ফেসবুক আসক্তির ফলে যা যা ঘটে : ১. আবেগ-অনুভূতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে; ২. হতাশা ও দুশ্চিন্তা পেয়ে বসে; ৩. একাকীত্ব বোধ জন্মে এবং মানুষ নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করে; ৪. কাজের সময় ঠিক থাকে না, কাজের আগ্রহ কমতে থাকে; ৫. সময়জ্ঞান লোপ পায়; ৬. নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করার ফলে ঈর্ষাবোধ হতে শুরু করে; ৭. দায়-দায়িত্ব ভুলে মনোযোগ ডুবে থাকে ফেসবুকে; ৮. সম্পর্ক নষ্ট হয়; ৯. অনেক শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন- পিঠব্যথা, মাথাব্যথা, স্পন্ডিলাইটিস বা মেরুদণ্ডে সমস্যা, ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, ইনসমনিয়া বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা, চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি। তাই ফেসবুক ব্যবহারে আমাদের সংযত হতে হবে।