জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ: নওগাঁর বদলগাছীতে ৭ দিনের ব্যবধানে হঠাৎ দাম বেড়ে গেলো ডিমের। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০টাকায় আর প্রতি পিস ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ। অপরদিকে প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নেই কোনো সুখবর।
অন্যদিকে, নিত্যপণ্যের এই চড়া বাজারে নাভিশ্বাস ফেলছে খেটে খাওয়া মানুষ ও মধ্যবিত্তরা। মাংসের পরিবর্তে পুষ্টির যোগানদাতা ডিমের দাম যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, দিনমজুর মানুষের বড় অংশের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই ডিম। আর এসব মনুষেরা শরীরে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্যের ঘাটতি মেটাতে মাছ ও মাংসের পরিবর্তে ডিম খাচ্ছিলেন। এখন সেই ডিমের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে তাঁদের।
রবিবার ১৩ই আগষ্ট বদলগাছী বাজার ঘুরে দেখাযায়, লাল লেয়ার মুরগির ডিম প্রতি পিস ১৪-১৫ টাকা ও হালি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, হাঁসের ডিম প্রতি পিস ২০ টাকায় ও হালি ৮০ টাকা, আর দেশী মুরগির ডিম প্রতি পিস ১৭-১৮ টাকা ও হালি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দওে বিক্রয় হচ্ছে।
বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাত্র ৭ দিনেই আবারও ডজনে ২৪ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। যদিও পাইকারি পর্যায়ের দাম নিয়ে তৈরি হয়েছে কল্পনিক কাহিনী। পাইকারিতে প্রতি পিস ডিম কিনছেন ১২ টাকা ৫০ পয়সা করে। কিন্তু দোকানিরা বলছেন, প্রতি পিস ডিম ১৩টাকা কমে মিলছে না। আর ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে সাড়ে ১৪টাকা থেকে ১৫ টাকা।
গত সপ্তাহে, ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ৪৬ টাকা হালি দরে। মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে ৮থেকে ১৪টাকা বেড়ে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০টাকায়। আর এর প্রভাব পড়েছে হাঁস ও দেশি মুরগির ডিমের উপড়েও। বাজারে দেশি মুরগির ডিম এবং হাঁসের ডিম নেই বললেই চলে যা আছে তাও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
জিধিরপুর থেকে বদলগাছী বাজারে নাইমুল এসেছেন ডিম কিনতে। সে পেশায় একজন এনজিও কর্মি। হঠাৎ ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে তাঁক। সবাই মিলে মেসে রান্না করে খেতে হয়। লিস্ট করে বাজার করতে বলেছে। ডিমের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় অন্যান্য বাজার কম করে নিতে হচ্ছে। তিনি চান বাজার যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরেক ক্রেতা হাফিজ বলেন, ডিম মোটামুটি সবাই খায়। সবার কাছে এটি একটি প্রিয় খাবার। তিন দিনের মধ্যে ডিমের দামটা বেড়ে গেল। কিভাবে মেনে নেই বলেন তো? কয়েক দিন আগে এই ডিম কিনছি ৪২ টাকা থেকে ৪৪ টাকা হালি দরে। আর আজকে কিনতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০টাকায়। আমাদের সমস্যা বলে বোঝানো যাবে না। বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। ডিম খেয়ে থাকবেন? সেটাও আর হলো না।
ডিমের মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ডিম বিক্রেতা মান্নান বলেন, “দাম কেনো বেড়েছে তা আমার জানা নেই। সরবরাহ কম ও ফার্ম থেকে ডিমের দাম বাড়াচ্ছে । কবে ডিমের দাম কমবে সেটিও আমার জানা নেই। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। আর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতা কিছুটা কম এটাও সঠিক।”
আমিনুল রহমানে নামের আরেক ডিম বিক্রেতা বলেন, আমরা এক-দুই টাকা লাভের আশায় ডিম বিক্রি করি। আড়তে দাম বাড়লে আমাদের তো কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ আমি জানি না। আমাদের কে ডিম দিচ্ছে মেমো ছাড়া।
মানবতার দেওয়ালের প্রতিষ্ঠাতা হিরক বলেন, বাজারে মনিটরিং না থাকায় ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকতো।
বদলগাছী বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইমামুল আল হাসান তিতু বলেন, পোল্ট্রি খাতে ফিড সহ সকল প্রকার সামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে খামারীরা দাম বাড়াচ্ছে। খামারীরা বলছেন উৎপাদন কমেছে খরচ বেড়েছে আমরা কি করবো।
জাতীয় ভোক্তা নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নওগাঁর সহকারী পরিচালক রুবেল আহাম্মেদ বলেন, ডিমের বাজার বাড়ার সাথে সাথে মহা পরিচালক আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছি। গত শনিবার নওগাঁ শহরে আমরা অভিযান চালিয়েছি। বাজার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ডিমের দাম বাড়ার বিষয়টি আমি দেখবো।