,

কলম খুঁজে না পেয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর, শিক্ষক বরখাস্ত

জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় শ্রেণি কক্ষে পাঠদান শেষে নিজের ব্যবহৃত কলম খুঁজে না পেয়ে অন্তত ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে আনিছুর রহমান নামে এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার পর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। পরে শিক্ষক আনিছুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি।
ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা গলাকাটি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনিছুর রহমান অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ে পাঠদান করাচ্ছিলেন। পাঠদানের সময় ওই শিক্ষক তার ব্যবহৃত একটি কলম শ্রেণি কক্ষের টেবিলে রাখেন।
পাঠদান শেষে তিনি কলমটি টেবিলের ওপর না পেয়ে সব শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় কোনো শিক্ষার্থী কলমটি নেয়নি বলে জানায়।
এ নিয়ে আনিছুর রহমান চড়াও হয়ে একে একে ওই শ্রেণি কক্ষের অন্তত ৩৫ জন শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাঠ ও স্টিলের স্ক্রেল দিয়ে মারধর করেন। কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে আবার চড়-থাপ্পারও দেন তিনি।
এ ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থীর হাতের তালু ও আঙ্গুলসহ বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়। আহত শিক্ষার্থীরা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকসহ বিভিন্নভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী শামিম মিয়া বলেন, ‘ইয়া বড় কাঠের বেত; দুই জনার হাতে ভাঙছে। সেই বেত ভাঙার পর লোহার (স্টিল) বেত নিয়ে-এমন মাইর দিছে; আমারও হাত ফাটিফুটি গেছে।’
একই শ্রেণির রফিক মিয়া বলেন, ‘এক কানিত থাকি স্টিলের বেত দিয়ে সবাক ডাংগাছে (মারধর করছে)। স্কেল বেগা (বাঁকা) হয়া গেছে; সেটা আবার টেবিল বাজে দিয়ে সোজা করছে। ফির শুরু করছে ডাংগানি।’
শিক্ষার্থী শারমিন আক্তারের মা জরিনা বেগম এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার মতো অনেক শিক্ষার্থীর স্বজনদের চোখে-মুখে ক্ষোভ দেখা গেছে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘কলমটা যদি তাই (শিক্ষক) অন্য ক্লাসে রাখি আসে; সেটা কী আমাদের ছোলের (সন্তান) দোষ। তাই জন্যে এমন ডাং ডাংগায় কেউ। ডাংগে কারো হাত ফাটছে; কারও আঙ্গুল।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চার হাতের তালু ফেটে গেছে। রক্ত ঝড়ছে। বিনা কারণে আমার বাচ্চাক চোর উপাধি দিছে। অন্যায়ভাবে মারছে। আমি এই শিক্ষকের বিচার চাই।’
এ বিষয়ে শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘সততার পরিচয় দেয়ার জন্য আমি বলেছি- দেখ কলমটা দিয়ে দাও তোমরা। না হলে কিন্তু আমি তোমাদের একটা পিটনি (পিটুনি) দেব। এক পর্যায়ে তারা কলমটা দিলই না।
‘তাই সততার পরিচয় না দেয়ার কারণে ছোট্ট একটা স্কেল (বেত) ছিল সেটা ভেঙে গেছে (শিক্ষার্থীতের মারতে মারতে বেতটি ভেঙে যায়)। সেজন্য হয়তো কোথাও লেগেছে।’
শিক্ষার্থীদের শক্ত কাঠ ও স্টিলের বেত দিয়ে মারধর করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভুল হয়েছে। আমি শিক্ষার্থীসহ কমিটির কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’
অভিযুক্ত শিক্ষক আনিছুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও কমিটির সদস্যসহ উপস্থিত অভিভাবকদের কাছে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। তার পরও বিদ্যালয় কমিটির সিদ্ধান্তে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর


Antalya korsan taksiAntalya korsan taksi