অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি হলেন খালিয়াজুরির ১ নম্বর মেন্দিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. লোকমান হেকিম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জেলা পাউবোর পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, লোকমান হেকিম ও মেন্দিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল কবির দীর্ঘদিন ধরে একটি মৎস্য সমিতির নামে নন্দের পেটনা জলমহাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। গতকাল রাত আটটার দিকে লোকমান লোকজন নিয়ে জলমহালে পানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাশের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসান। কিন্তু বাঁধে পানির প্রচুর চাপ থাকায় সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে নন্দের পেটনা হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে লোকমানকে ধাওয়া করেন। এ সময় লোকমান তাঁর মোটরসাইকেল রেখে দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা মোটরসাইকেলটি পানিতে ফেলে দেন।
পরে বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে পাউবো ও প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। স্থানীয় কৃষক ও শ্রমিকদের নিয়ে তাঁরা বাঁশ, চাটাই, বস্তা ইত্যাদি ফেলে বাঁধ রক্ষায় সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল বলেন, ‘টানা ২৫ দিন ধরে আমরা রাতদিন বাঁধে অবস্থান করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ কীর্তনখোলাকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। জেলায় কোনো হাওরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাঁধ ভেঙে ফসলহানি হয়নি। কিন্তু গতকাল রাতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে নন্দের পেটনার বাঁধ কেটে দেওয়ার কারণে এখন হাওরে পানি ঢুকছে। ভাঙন ঠেকাতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। এ ঘটনায় পাউবোর পক্ষ থেকে উপসহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল খান বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, লোকমান হেকিম তাঁর লোকজন নিয়ে বাঁধ কেটে দিয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ জানিয়েছেন। যে বাঁধটি কেটে দেওয়া হয়েছে, সেটা খুবই শক্ত বাঁধ ছিল। ধনু নদের পানি এখন বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। গত কয়েক দিন আগে নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। তখনো বাঁধ থেকে পানি প্রায় তিন ফুট নিচে ছিল। বাঁধটি টিকাতে না পারলে অনেক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
খালিয়াজুরি কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, খালিয়াজুরিতে প্রায় ৯০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেলেও বাঁধটি রক্ষা করতে না পারলে পেটনার হাওর, বোয়ালির হাওর, মেন্দিপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি হাওর, মদন উপজেলার গোবিন্দ্রশী, উচিতপুরসহ অনেক হাওরে প্রভাব পড়বে। এতে ১৫০ হেক্টরের বেশি জমির বোরো ধান তলিয়ে যাবে।
গতকাল রাতে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে বাঁধ রক্ষায় আমরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে লোকমান হেকিমের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁকে পুলিশ খুঁজছে। কৃষকের ফসলহানি ঘটলে এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লোকমান হেকিমের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল রাতে এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।