,

ফরিদপুরে ঐতিহ্যবাহী কাটাগড়ের মেলা শুরু

জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুর: ধর্মীয় সাধক দেওয়ান শাগের শাহে্র (রহ.) মাজারের বার্ষিক ওরশ উপলক্ষে প্রতিবছর মতো এবারও ফরিদপুরে শুরু হয়েছে কাটাগড়ের মেলা।

বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বাংলা সনের ১২ চৈত্র শাগের শাহে্র মৃত্যুবার্ষিকীতে ওরসের পাশাপাশি বসে এই মেলা। মেলায় মাজারের ভক্ত নারী-পুরুষ ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে কয়েক লাখ লোকের আগমন ঘটে।

ঐতিহাসিকদের মতে, অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য কাটাগড়ে আসেন দেওয়ান শাগের শাহ। তিনি ছিলেন একজন সাধক। ধারণা করা হয় ১৮ শতকের গোড়ার দিকে কাটাগড়ে আস্তানা গাড়েন তিনি।

১৮ শতকের প্রথমদিকে ইহধাম ত্যাগ করেন এই আধ্যাত্মিক সাধক। তার ইহধাম ত্যাগের দিন ভক্তকুল জড়ো হতে থাকে ও তার স্মরণে ওরশ শরীফের আয়োজন করে।

কালক্রমে ওরশ ঘিরে জমে উঠে এ মেলা। আধ্যাত্মিক সাধক শাগের দেওয়ান শাহ মাজারে ওরসকে ঘিরে প্রতি বছর বাংলা ১১, ১২ ও ১৩ চৈত্র থেকে এ মেলার আয়োজন করা হয়।

তিনদিনের এই আয়োজন ১৫ চৈত্র শেষ হলেও এর রেশ থাকবে আরও ১৫ দিনব্যাপি।

আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাগের শাহের মাজারে ওরশ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকে এ মেলা শুরু হয়।

১৫ দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী এ মেলায় রকমারি পণ্য, নানা প্রজাতি আর হাতের কারুকাজ বিভিন্ন ধরনের পালঙ্ক দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ছে। মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে মেলায় বসা মিষ্টির দোকান ।

মেলা উপলক্ষে মাজারের পাশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ একর এলাকায় কয়েক হাজার দোকান বসেছে।

এসবের মধ্যে রয়েছে ফার্নিচার, মিষ্টির দোকান ও খেলনার দোকান রয়েছে।

দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে সাঁজ বাতাসা, তালের পাখা, মাটি, লোহা ও বাঁশের তৈরি নানা গৃহস্থালি সামগ্রী।

এছাড়া রয়েছে চুড়ি-ফিতা, শরবত, খেলনা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী থেকে শুরু করে লাখ টাকা দামের খাট।

মেলার সময় কাটাগড় গ্রামসহ আশপাশের কলিমাঝি, সূর্যোগ, সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, শেখর, ভাটপাড়া, মাইটকুমরা, গঙ্গানন্দপুর, ছত্রকান্দা, বন্ডপাশা, বয়রা ও বামনগাতি গ্রামে ঈদের আমেজ বিরাজ করে।

মেলা উপলক্ষে এসব গ্রামে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার রীতি চালু আছে। অন্য সময় না এলেও এই এলাকার বিবাহিত মেয়েদের মেলা উপলক্ষে বাপের বাড়ি বেড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে প্রতিটি পরিবারে। আর এ এলাকার চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা যারা বাইরে থাকেন, তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন মেলা উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে আসার।

কুতনিপাড়া গ্রামের তপন সরকার বলেন, ‘জন্মের পর থেকে কাটাগড়ের মেলার নাম শুনতেছি। বাপ-দাদার হাত ধরে মেলায় যাওয়া শুরু। আমার এখন বয়স ৪৫। এ মেলা আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। বিভিন্ন স্থান থেকে আরও তিনদিন আগে থেকে আত্মীয়-স্বজন হাজির হয়েছেন।’

কাটাগড় মেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউল আজম বাবু মিয়া বলেন, ‘এটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী মেলা। মেলার শত বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। মেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কমিটির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে।’

আলফাডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মহিদুল হোসেন বলেন, ‘কাটাগড়ের মেলা এই এলাকার ঐতিহ্য। মেলাকে ঘিরে আশপাশের প্রায় ৫০ গ্রামজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। এ মেলার সাজ-বাতাসা প্রায় ঘরে বছরভর থাকে, যা এলাকার একটি পুরনো ঐতিহ্য। বিভন্ন গ্রামের অনেক মানুষ ঈদ বা পূজাতে বাড়ি না এলেও মেলা উপলক্ষে বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।’

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, ‘মেলার সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মেলায় শান্তি -শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি অসামাজিক কার্যকলাপ ও অশ্লীলতা বন্ধে মেলা কমিটিকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর