লিয়াকত হোসেন লিংকন: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহাত্মা চন্দ্রনাথ বসুর স্মৃতিবিজড়িত গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক কেন্দ্র রামদিয়াকে উপজেলা ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবি।
কাশিয়ানী উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হলেও অধিকাংশ ইউনিয়নের লোকজন প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন কাজে রামদিয়ার ওপর নির্ভরশীল। কারণ ভৌগোলিক দিক দিয়ে কাশিয়ানী উপজেলা এক কোনায় অবস্থিত। সে দিকে রামদিয়া বাজার উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। ফলে কাশিয়ানী উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রমসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া রামদিয়ায় প্রশাসনিক কাজকর্ম সম্পাদন করতে না পারায় যেটুকু উন্নতি হওয়ার কথা, সেটুকুও উন্নতি সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনিক কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য কাশিয়ানী সদরে যেতে হয়। সিংগা, হাতিয়াড়া ইউনিয়নের মানুষের কাশিয়ানী সদরে যেতে প্রায় ২/৩ ঘন্টা সময় লেগে যায়। ফলে সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।
ধান-চাউল, পাট, কাঠ ও মৎস্য আড়তের জন্য রামদিয়া বাজারের রয়েছে বেশ খ্যাতি। এখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও আমদানী-রপ্তানি হয়ে থাকে। এ বাজারের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ¦বর্তী রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নড়াইল, মাগুড়া, যশোর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, খুলনা, বরিশাল, প্রভৃতি জেলার লোকজনের ব্যবসায়িক যোগাযোগ রয়েছে।
এখানে পুলিশ ফাঁড়ি, ডাকবাংলো, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সাব রেজিষ্ট্রারি অফিস, হাইস্কুল, বালিকা স্কুল, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, কৃষি অফিস, ব্র্যাক অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, পশু অফিস, ভূমি অফিস, কৃষি ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, গ্রামীন ব্যাংকসহ একাধিক ব্যাংকের এজেন্ট শাখা রয়েছে।
এছাড়া ডাকঘর, হাসপাতাল, ক্লিনিক, খাদ্য গুদাম, পাঠাগার, টিএন্ডটি অফিস, কাঠ আড়ৎ, মৎস আড়ৎ, গ্রাম আদালত, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও অফিস, ছোট-খাটো শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রামদিয়া বাজার অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সুতরাং এসব গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে রামদিয়াকে উপজেলা ঘোষণা করার যথেষ্ট দাবি রাখে। সে কারণে কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাতটি ইউনিয়নসহ গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর এবং মুকসুদপুর উপজেলার উজানী ও মাহমুদপুর এই দশটি ইউনিয়ন নিয়ে রামদিয়াকে উপজেলা করা হোক এমনটই দাবি স্থানীয়দের। ওই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি করে আসলেও আজও তা অপূরণ রয়েছে গেছে।
এ অঞ্চলের মানুষ সবাই তাঁর প্রিয় নেতার প্রতিশ্র“তির বাস্তবায়ন চায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে রামদিয়া এবং রামদিয়ার আলোকিত মানুষ চন্দ্রনাথ বসু সম্পর্কে বইয়ের ১৮৮ থেকে ১৯২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অনেক কিছুই লিখেছেন। স্বাধীনতার আগে বঙ্গবন্ধু অনেকবারই রামদিয়ায় এসেছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে সর্বশেষ তিনি রামদিয়ায় এসে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন রামদিয়াকে থানা পর্যায়ে উন্নীত করা হবে। যা ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধুর রামদিয়ায় এসে থানা ঘোষণা করার কথা ছিল বলে জানা গেছে।
কিন্তু রামদিয়াবাসীর দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু সংখ্যক বিপদগামী সেনার হাতে তিনি শাহাদৎ বরণ করেন। এখন এই দায় বর্তমান সরকারের ওপর বর্তায়ছে। এলাকার মানুষ এখন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে, তারা চায় তাদের প্রিয় নেতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবে; রামদিয়াবাসী আশায় বুক বেঁধে আছে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। কবে তিনি রামদিয়াকে উপজেলা পর্যায়ে উন্নীত করবেন। কখন আসবে সেই বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের ঘোষণা।
রামদিয়াকে উপজেলা ঘোষণা বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্নের ব্যাপারটি এখন শুধু রামদিয়া দাবি নয়, এটি এখন একটি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারকেই সর্বোত্তভাবে দায়িত্ব নিতে হবে; যাতে মহান নেতার ইচ্ছা বাস্তবে রূপ পায়।