লিয়াকত হোসেন লিংকন: চিত্ত বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিনোদন বঞ্চিত হচ্ছে কাশিয়ানী উপজেলাবাসী। আজও কাশিয়ানীতে গড়ে ওঠেনি শিশুদের বিনোদনের জন্য কোন পার্ক। বিকালে ঘোরার জন্য কাশিয়ানীবাসীর একমাত্র ভরসা রেললাইন ষ্টেশন।
ওড়াকান্দি শ্রীধাম ঠাকুরবাড়ী, হিরোন্যকান্দি শতবর্ষী আমগাছ, মধুমতি বাওড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে মনোরম নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও পৃষ্ঠপোষকতা ও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেনি। সমাদৃত হয়নি বিনোদন প্রেমীদের কাছে।
কাশিয়ানী উপজেলার পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদী থেকে সৃষ্ট মধুমতি বাওড়ের দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাব এবং প্রভাবশালীদের দখল-দূষণে বেহাত হতে চলেছে দৃষ্টিনন্দন মধুমতি বাওড়টি। স্থানীয় প্রভাবশালী বাওড়ের পাড় ঘেঁষে গড়ে তুলেছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা।
এদিকে, উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের হিরোণ্যকান্দি গ্রামে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে প্রায় দু’শত বছরের অধিক সময় ধরে কালের সাক্ষী হয়ে চারিদিকে ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি দৃষ্টিনন্দন বিশালাকৃতির আম গাছ। গাছটি প্রায় এক বিঘা জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এ গাছটি এক নজরে দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন। এখানে প্রায় সারা বছরই দর্শনার্থীরা আগমন ঘটে থাকে। তবে বিশেষ করে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, দুর্গাপূজা, পহেলা বৈশাখ, ইংরেজী নববর্ষ, ভ্যালেইন্টেন ডে, একুশে ফেব্র“য়ারীসহ বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। মাঝে-মধ্যে ছোট-খাটো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে থাকে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে এসে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগের দর্শনার্থীরা। এমনকি দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা, বিশ্রামের ব্যবস্থা এবং টয়লেটের ব্যবস্থা নেই।
এছাড়াও উপজেলার ওড়াকান্দি শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মভূমিতে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ থাকলেও সেখানে এ পর্যন্ত বিনোদনের কোন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ঠাকুর বাড়ীতে রয়েছে কামনা সাগর ও দুধ সাগর নামে বিশালাকৃতির দু’টি দীঘি, একটি হরি মন্দিরসহ নানা প্রাচীন। বাড়িটি এ অঞ্চলের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বাড়িটির ভবনগুলোর স্থাপত্য শৈলী ও কারুকর্ম অত্যন্ত সুন্দর। ভবনগুলো প্রাচীন নিদর্শনের স্মৃতি বহন করে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও রক্ষনাবেক্ষনার অভাবে ধ্বংস হয়ে যাছে অনেক ঐতিহাসিক পূরার্কীতি। পর্যটক ও গবেষকদের চাহিদা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এসব পূরাকীর্তির তথ্য সমৃদ্ধ ইতিহাস তুলে ধরার কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ীকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রের অপার সম্ভাবনা।
কাশিয়ানীতে ‘ময়না’ নামে একটি সিনেমা হল থাকলেও দীর্ঘ বছর আগে নানা সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ভাটিয়াপাড়া বাজারে ‘তাজবীর’ সিনেমা হলটি টিকে থাকলেও, সেটিও অবশেষে লোকসানের মুখে পড়ে মালিকপক্ষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
সরকারি চাকরীজীবি মো. আলাউদ্দিন বলেন, একটু অবসর সময় কাটার মতো কোন স্থান নেই। বাধ্য হয়ে হিরোণ্যকান্দি শতবর্ষী আমগাছটি দেখতে আসি। কিন্তু এখানে নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। টয়লেট ও পানির কোন ব্যবস্থা নেই। সব সময় বখাটেদের আড্ডা থাকে।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ, এস, এম মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘দর্শণার্থীদের কথা বিবেচনা করে শতবর্ষী আমগাছটি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’